দিল্লিতে চলছে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন, যাতে যোগ দিয়েছেন জোটভুক্ত দেশের নেতারা
ছবি রয়টার্স

জি–২০ গোষ্ঠীভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশ আজ শনিবার একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা উন্মোচন করেছে। এর লক্ষ্য ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করা। বিশ্বের এক–তৃতীয়াংশ বাণিজ্য হয় যেসব অঞ্চলকে ঘিরে, তাদের একসূত্রে বেঁধে ফেলতে চায় আধুনিক যুগের এই স্পাইস রুট বা ‘মসলার পথ’।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানাচ্ছে, দিল্লিতে জি–২০ জোটের যে শীর্ষ সম্মেলন এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তারই এক ফাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যরা একটি চুক্তিতে সই করছে। চীন যে অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে, তারই একটি বিকল্প হিসেবে এটিকে দেখা হচ্ছে।

কর্মকর্তারা এএফপিকে বলেছেন, তথ্য, রেল, বিদ্যুৎ ও হাইড্রোজেন পাইপলাইনের মতো প্রকল্প থাকছে এই পরিকল্পনায়।

একটি প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রেল ও বন্দরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেসব দেশের রেল ও বন্দর এই যোগাযোগের আওতায় আসতে পারে, সেসব দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, জর্দান ও ইসরায়েল। এর ফলে ভারত ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যের গতি বর্তমানের তুলনায় ৪০ শতাংশ বাড়বে।

এই পরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করার আগে এএফপি জানিয়েছিল যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের কাছে ‘ভারত–মধ্যপ্রাচ্য–ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর কোনো অংশে কম ঐতিহাসিক নয়।’

এই চুক্তি বাণিজ্য বাড়াবে। একই সঙ্গে ইসরায়েলের সঙ্গে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সংঘাত ঘটেছে ও সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। ওয়াশিংটন চাইছে রিয়াদ এখন সম্পর্ক স্বাভাবিক করুক।

তবে রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক এখন খুব ভালো নয়। যুক্তরাষ্ট্র–ইরান পারমাণবিক চুক্তি ও ২০১৮ সালে ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে তা রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক ভালো হতে সাহায্য করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন ফিনার বলেন, ভারত–মধ্যপ্রাচ্য–ইউরোপের মধ্যে সংযোগ তৈরির উদ্যোগটির ‘অমিত সম্ভাবনা’ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘মাসের পর মাস ধরে সতর্ক কূটনৈতিক তৎপরতা, নীরব ও সাবধানী কূটনীতি, দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আলোচনার পর’ এ বিষয়ে জনসমক্ষে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।

‘ইউরোপ থেকে ভারত’ প্রকল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। অংশগ্রহণকারীরা এখনো পরীক্ষা করে দেখছেন যে ভারতের ১৪০ কোটি মানুষ ও দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতিকে কীভাবে পশ্চিমের বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়।

যেসব দলিলপত্র এএফপি দেখেছে, তাতে বলা হয়েছে যে ভারত–মধ্যপ্রাচ্য–ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর এমন অবকাঠামো গড়ে তুলবে যাতে করে ‘পরিবশবান্ধব হাইড্রোজেন’ উৎপাদন ও পরিবহন করা যায়। এ ছাড়া, সাগর তলে নতুন কেব্‌ল (তার) স্থাপন করে টেলিযোগাযোগ ও ডেটা সঞ্চালন আরও জোরদার করাও এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, চীনের বহুল আলোচিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা বেল্ট ও পথ উদ্যোগের প্রতি এই পরিকল্পনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে দেখা যেতে পারে।

যাকে প্রায়শই নতুন সিল্ক রোড হিসেবে বর্ণনা করা হয়, সেই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে চীন তার প্রভাব, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ইতিমধ্যে ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে নিয়ে গেছে।

এক সময়ে টুইটার নামে পরিচিত ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘যদি এটা (ভারত–মধ্যপ্রাচ্য–ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডর) চূড়ান্ত হয়, তাহলে তা ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে যোগাযোগ শক্তিশালী করবে এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পাল্টা হিসেবে কাজ করবে।’