চীনা কোম্পানির ভারতে ব্যবসা করার ঝক্কি, যা জানাল শাওমি

চীনের কোম্পানিগুলোর বিষয়ে ভারত সরকারের বিশেষ সতর্ক অবস্থানের কারণে চীনের স্মার্টফোন কোম্পানি শাওমি নয়াদিল্লিকে বলেছে, স্মার্টফোনের উপকরণ সরবরাহকারীরা সরকারের এই অবস্থানের কারণে ভারতে উৎপাদন শুরু করতে আস্থা পাচ্ছেন না। এ–বিষয়ক চিঠি ও বিষয়টির সঙ্গে সরাসরি জড়িত সূত্রের বরাতে এ তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ভারতের স্মার্টফোন বাজারে সবচেয়ে বড় হিস্যা চীনের কোম্পানি শাওমির, দেশটির বাজারের ১৮ শতাংশ তাদের দখলে। ৬ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে তারা ভারত সরকারকে স্মার্টফোনের উপকরণ উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব দিয়েছে।

শাওমি ভারতে যে স্মার্টফোন সংযোজন করে, তার উপকরণ মূলত স্থানীয় পর্যায় থেকে তারা সংগ্রহ করে। তবে কিছু উপকরণ আসে চীন ও অন্যান্য দেশ থেকে। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় শাওমির কাছে জানতে চেয়েছিল, স্মার্টফোনের উপকরণের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আর কী করা যেতে পারে। সেই চিঠির জবাব দিতে গিয়ে শাওমি তাদের মন্তব্য জানিয়েছে।

ভারতে চীনের যেসব কোম্পানি কাজ করছে, তারা ভারত সরকারের নিরীক্ষার বিষয়ে খুব একটা কথা বলতে না চাইলেও শাওমির এই চিঠি থেকে বোঝা যাচ্ছে, ভারতে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, বিশেষ করে স্মার্টফোনের বাজারে। কারণ, স্মার্টফোনের অনেক উপকরণ সরাসরি চীন থেকে আমদানি করতে হয়।

চিঠিতে শাওমি ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট মুরালিকৃষ্ণান বলেছেন, ভারত সরকারকে আস্থা তৈরিতে কাজ করতে হবে, যাতে উপকরণ সরবরাহকারীরা স্থানীয় পর্যায়ে কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত হন। তিনি কোনো কোম্পানির নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, স্মার্টফোনের উপকরণ সরবরাহকারীদের ভারতে কারখানা স্থাপনের বিষয়ে একধরনের শঙ্কা রয়েছে। চীনা কোম্পানিগুলো ভারতে কাজ করার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, সে কারণে তাদের মধ্যে এই উদ্বেগ।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলোর উদ্বেগের মূল জায়গা হচ্ছে নিয়মকানুন ও ভিসা। যদিও বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। সেই সঙ্গে অন্যান্য বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, এসব বিষয় আমলে নেওয়ার জন্য সরকারকে তৎপর হতে হবে এবং বিদেশি সরবরাহকারীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে। শাওমি মনে করে, সেই সঙ্গে ভারতে কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

তবে এ বিষয়ে আরও জানতে শাওমি ও ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তারা সাড়া দেয়নি।

শাওমির ওপর সময়-সময় খড়্গহস্ত হয়েছে ভারত সরকার। ২০২২ সালে বেআইনি বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের অভিযোগে শাওমি ইন্ডিয়ার ৫ হাজার ৫৫১ কোটি রুপি বাজেয়াপ্ত করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তদন্তের সময় বলা হয়, স্মার্টফোন কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ভারতে কাজ শুরু করে। ২০১৫ সাল থেকে তারা বিদেশে অর্থ পাঠাতে শুরু করে। এক বিবৃতিতে তখন ইডি জানায়, ৫ হাজার ৫৫১ কোটি রুপি তিনটি বিদেশি কোম্পানিকে পাঠিয়েছে তারা। এর মধ্যে ছদ্মনামে একটি সংস্থা শাওমিরই নিজস্ব, রয়্যালটির নামে ওই অর্থ পাঠানো হয়েছিল।

মূলত ২০২০ সালে সীমান্তে ভারত ও চীনের সেনাদের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ভারতে চীনবিরোধী জাতীয়তাবাদী আবেগ শক্তিশালী হতে শুরু করে। ওই সময় ভারত তিন শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। সে দেশে চীনের যেসব কোম্পানি কাজ করছে, তাদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। চীনের বিনিয়োগ গ্রহণের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়।

এমনকি দেশীয় কোম্পানিগুলোকে ‘সুবিধা পাইয়ে দিতে’ ১২ হাজার রুপির চেয়ে কম দামের চীনা স্মার্টফোনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভেবেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। চীনের সস্তা মুঠোফোনে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতো শাওমিসহ চীনের বেশ কয়েকটি স্মার্টফোন কোম্পানি। কারণ, কমদামি স্মার্টফোনের ভারতীয় বাজারের অনেকটাই তাদের দখলে।

জানুয়ারিতে ভারতের শিল্পনীতিবিষয়ক শীর্ষ আমলা রাজেশ কুমার সিং ইঙ্গিত দেন, সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত হলে চীনের বিনিয়োগের বিষয়ে ভারতের সতর্কতা অনেকখানি কমতে পারে।