অর্থনীতি নিয়ে অনন্য সমস্যায় চীন

চীনফাইল ছবি: রয়টার্স

সারা বিশ্বের অর্থনীতি যেদিকে যাচ্ছে, চীনের অর্থনীতি যাচ্ছে ঠিক তার বিপরীতে। সব বড় অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তি হলেও চীনে উল্টো মূল্যহ্রাস হচ্ছে। চাহিদা কমে যাচ্ছে দেশটিতে। আবাসন ও ঋণসংকটে সামগ্রিকভাবে জর্জরিত হচ্ছে চীনের অর্থনীতি।

২০২৩ সালজুড়ে চীনে পণ্যমূল্য কমেছে। ধারণা করা হচ্ছিল যে ২০২৪ সালে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে দেশটি। কিন্তু বাস্তবে সেটি ঘটছে না। বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেও দেশটিতে পণ্যমূল্য কমেছে। জানুয়ারি মাসে দেশটিতে মূল্যহ্রাস হয়েছে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। এ নিয়ে টানা চার মাস দেশটিতে পণ্য ও সেবার মূল্যহ্রাস হয়েছে। সেই সঙ্গে এটি ছিল গত ১৫ মাসের মধ্যে মূল্যহ্রাসের সর্বোচ্চ হার।

অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, এই মূল্যহ্রাসের কিছু মৌসুমি কারণ আছে। মূল্যহ্রাসের প্রভাব পড়ছে মানুষের পারিবারিক আয়, করপোরেট আয় ও সরকারি করে। ইনিস্টিটউট অব ইন্টআরন্যাশনাল ফাইন্যান্সের তথ্যানুসারে, এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে বেইজিংকে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হবে।

আরও কিছু তথ্য দেওয়া হলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়, যেমন গত ২২ মাস ধরে চীনের খাদ্য ও জ্বালানি বহির্ভূত সিপিআই বা ভোক্তা মূল্যস্ফীতির হার ১ শতাংশের নিচে। ২০২৩ সালে দেশটির জিডিপি ডিফ্লেটর ছিল মাইনাস শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ; অর্থাৎ দেশটির এই মূল্যহ্রাসের প্রবণতার পরিসর অনেক বড়।

আইআইএফের অর্থনীতিবিদেরা নোটে লিখেছেন, চীনের শিল্প খাতের অতি সক্ষমতা ও আবাসন খাতের মন্দা এর মূল কারণ। তাঁরা আরও বলেছেন, পণ্যের দাম সেবার দামের চেয়ে বেশি হ্রাসের কারণ হলো শিল্পের অতি সক্ষমতা।

এ ছাড়া চীনের আবাসন খাতের চলমান সংকটের কারণে গৃহস্থালি পণ্য ও বাড়ির দাম কমেছে। গত বছর বাড়ির দাম সামগ্রিকভাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। আইআইএফ মনে করছে, বাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে গৃহস্থালিসামগ্রী, আসবাবপত্র ও গৃহ উন্নয়নসামগ্রীর দাম কমেছে।

আইআইএফের অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, বাজারে আরও মূল্যহ্রাসের পরিস্থিতি তৈরি হলে দেখা যাবে, ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা ব্যয় হ্রাস করবেন। মূল্যহ্রাসের কারণে বর্তমান বাজারমূল্যে জিডিপি কমে যাবে এবং ঋণ-জিডিপির অনুপাত বেড়ে যাবে, সেই সঙ্গে ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। একদিকে সম্পদের মূল্য কমে যাচ্ছে এবং আরেক দিকে সম্পদের চেয়ে ঋণ বেড়ে যাচ্ছে—এসব কারণে বিনিয়োগ ও ভোগ কমে যাচ্ছে।

সরকারি পরিসংখ্যানে গত বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কম হয়নি; ২০২৩ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালেও ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশের জোগানদাতা আবাসন খাতের অবস্থা খুবই করুণ। ফ্ল্যাট বিক্রি কমে যাওয়ার পাশাপাশি দামও কমে গেছে। এতে মালিকদের আয় কমে গেছে, শ্রমিকেরাও আগের বছরের চেয়ে কম আয় করছেন। এসব কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে সংকোচনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বেকারত্ব।