আয়ের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ ১০ কোম্পানি

একটি কোম্পানি কত বড়, তার বিভিন্ন মানদণ্ড আছে। সেগুলো হচ্ছে—কোম্পানিটির আয় কত, মুনাফা কত, বাজার মূলধনই কত এবং সেখানে কত কর্মীই–বা কাজ করেন। এসবই হলো একটি কোম্পানি কত বড় তা বোঝার মানদণ্ড।

সাধারণত যাদের ব্যবসার পরিসর বড়, তাদের আয় বেশি হয়। আবার আয় বেশি হলেই যে সেই কোম্পানির মুনাফা বেশি বা বাজার মূলধন বেশি, তা নয়। আয়ের শীর্ষ তালিকায় যেসব কোম্পানি আছে, বাজার মূলধনের শীর্ষ তালিকায় তারা নেই। দেখে নেওয়া যাক, আয়ের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি কোনগুলো। সূত্র কোম্পানিস মার্কেট ক্যাপ ডটকম।

ওয়ালমার্ট, আয়: ৬৯৩.১৫ বিলিয়ন ডলার, দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বিশ্বের খুচরা ব্যবসায় জগতের মহিরুহ প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্ট। ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাসের স্যাম ওয়ালটন এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর থেকে ক্রমাগতভাবে কোম্পানিটির উত্থান অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক হাজারের মতো দোকান আছে ওয়ালমার্টের। সেই সঙ্গে আছে সুপার সেন্টার ও ছাড়ের দোকান। ওয়ালমার্টের কৌশল হলো, দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলো কম দামে বিক্রি করা। পণ্যের বিপুল সমাহার আছে তাদের। ফলে তাদের রাজস্ব আয়ও বেশি। রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি কর্মী সংখ্যার দিক থেকেও তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি। রাজস্ব আয়ের এই হিসাব ১ আগস্ট ২০২৪ থেকে ৩১ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত।

অ্যামাজন, আয়: ৬৯১.৩৩ বিলিয়ন, দেশ: যুক্তরাষ্ট্র

ওয়ালমার্টের মতো অ্যামাজনও খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান। তবে এটি একটি ই–কমার্স, অর্থাৎ অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। বর্তমান পৃথিবীতে ই-কমার্সের যে বাড়বাড়ন্ত সেই পথ কিন্তু দেখিয়েছে অ্যামাজন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই অ্যামাজন অনলাইনে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী। ১৯৯৪ সালে মূলত অনলাইনে বই বিক্রি দিয়ে তিনি এই ব্যবসা শুরু করেন। এখন এমন কোনো জিনিস নেই, যা অ্যামাজনে পাওয়া যায় না বললেই চলে। ই-কমার্সের পাশাপাশি ক্লাউড কম্পিউটিং ও এআইসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে অ্যামাজন। ব্যবসার এই বিপুল পরিসরের কারণে রাজস্ব আয়ে তারা বিশ্বের দ্বিতীয়। কর্মী সংখ্যার দিক থেকেও তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি। রাজস্বের এই হিসাব ২ অক্টোবর ২০২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত।

সৌদি আরামকো, আয়: ৪৬১.৫৬ বিলিয়ন ডলার, দেশ: সৌদি আরব

সৌদি আরমাকো সৌদি আরবের রাষ্ট্রমালিকানাধীন তেল কোম্পানি। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী কোম্পানি। মুনাফার দিক থেকেও এটি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি। এই কোম্পানির হাতে বর্তমানে ২৭০ বিলিয়ন ব্যারেল অপারিশোধিত তেলের মজুত আছে। তেল উৎপাদনের সঙ্গে পরিশোধন, পেট্রোকেমিক্যাল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসও উৎপাদন করে এই কোম্পানি। ২০১৯ সালে ২৫ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের আইপিও ছেড়ে তারা শেয়ারবাজারে আসে। ২০২৩ সালে তারা রেকর্ড ১৬১ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ১০০ কোটি ডলার মুনাফা করে। আয়ের এই হিসাব ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

সিনোপেক, আয়: ৪৫৩.১৪ বিলিয়ন ডলার, দেশ চীন

চায়না পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড কেমিক্যাল করপোরেশন বা সিনোপেক গ্রুপ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জ্বালানি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তেল ও গ্যাসের মূল্যশৃঙ্খলে যেসব পর্যায় আছে, তার প্রায় সবই এরা করে থাকে। তেল ও গ্যাস উত্তোলন থেকে শুরু করে পরিশোধন, পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন, বিপণন—সবই এরা করে থাকে। এটি চীনের বৃহত্তম তেল পরিশোধনাগার ও পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদনকারী। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাসায়নিক কোম্পানিও এটি। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল পরিশোধন কোম্পানি এটি। পেট্রোলিয়াম ও রাসায়নিক পদার্থের বিশাল বিক্রয় নেকটওয়ার্ক পরিচালনা করে এই কোম্পানি। তাদের আয়ের এই হিসাব ২০২৩ সালের। এরপর তারা হিসাব হালনাগাদ করেনি।

ইউনাইটেড হেলথ, আয়: ৪৩৫.১৫ বিলিয়ন ডলার, দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

ইউনাইটেড হেলথ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানি। স্বাস্থ্যসেবাবিষয়ক প্রযুক্তি নিয়েও তারা কাজ করে। স্বাস্থ্যসেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার চালু করে তারা আরও উন্নত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি ৫ কোটির বেশি গ্রাহককে সেবা দিয়ে থাকে। সারা বিশ্বে তাদের প্রায় ৪ লাখ কর্মী আছে। সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ বিক্রয় ও তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিয়ে থাকে।

অ্যাপল, আয়: ৪১৬.১৬ বিলিয়ন ডলার, দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

আইফোনের উৎপাদনকারী কোম্পানি অ্যাপল বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি। আয়ের দিক থেকে তারা আছে ষষ্ঠ স্থানে। ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবস ও তাঁর সহযোগীদের হাত ধরে অ্যাপলের যাত্রা শুরু হয়। আকর্ষণীয় ডিজাইন, নিরাপদ সফটওয়্যার ও নৈপুণ্যের জন্য অ্যাপলের পণ্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়। আইফোন, ম্যাক ও আইপ্যাডসহ অ্যাপলের সব পণ্যের নিরাপত্তাব্যবস্থা শক্তিশালী। অ্যাপলের এই আয়ের হিসাব ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে, আয়: ৩৯৭.১৪ বিলিয়ন ডলার, দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বিনিয়োগ গুরু খ্যাত ওয়ারেন বাফেটের কোম্পানি বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে। ছোট বস্ত্র কোম্পানি থেকে শুরু করে এখন বিমা, রেল, জ্বালানি ও ভোক্তা পণ্যসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে কোম্পানি। ওয়ারেন বাফেট টেক্সটাইল কোম্পানি হিসেবেই এটি কেনেন। ১৯৬৭ সালে এর সম্প্রসারণ ঘটান। আস্তে আস্তে বার্কশায়ারকে তিনি হোল্ডিং কোম্পানিতে পরিণত করেন। সবার আগে বিমাশিল্পে প্রবেশ করেন তিনি। প্রথমে ন্যাশনাল ইনডেমনিটি কোম্পানি নামে একটা বিমা প্রতিষ্ঠান কিনে নেন। পরে কেনেন গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি (জিইআইসিও বা গেইকো)। মূলত বিমা কোম্পানির মাধ্যমেই বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের উত্থান। ১৯৮৫ সালে ওয়ারেন বস্ত্রকলের কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ করে দেন। তাঁর কোম্পানির আয়ের এই হিসাব ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

পেট্রো চায়না, আয়: ৩৯৪.৬২ বিলিয়ন ডলার, দেশ: চীন

পেট্রো চায়না চীনের অন্যতম বড় তেল ও গ্যাস কোম্পানি। এটি চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তেল–গ্যাস অনুসন্ধান, উৎপাদন, পরিশোধন, পেট্রোকেমিক্যালস ও বিপণনে সক্রিয় এই কোম্পানি। চীনের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে তারা। চীনের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে এই কোম্পানির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কোম্পানিটির আয়ের এই হিসাব ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

সিভিএস হেলথ, আয়: ৩৯৪.০৮ বিলিয়ন ডলার, দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

সিভিএস হেলথ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি। ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে ছোট স্বাস্থ্য ক্লিনিক, পরামর্শপত্র ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য বিমাসেবা দিয়ে থাকে এই কোম্পানি। ২০১৮ সালে তারা একটি বিমা কোম্পানি কিনে স্বাস্থ্যসেবার পরিসর আরও বড় করে। সিভিএস সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে—এটিই তাদের বিশেষত্ব। তাদের আয়ের এই হিসাব ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

১০

ম্যাককেসন করপোরেশন, আয়: ৩৮৭.০৯ বিলিয়ন ডলার, দেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

এই মার্কিন কোম্পানি ওষুধ বিতরণ ও স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দিয়ে থাকে। স্বাস্থ্য খাতের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে তারা। ১৮৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তারা রোগীদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ সরবরাহ ও সহায়তা নিশ্চিত করছে।