২০২৪ সালে ভোক্তা ব্যয় বাড়বে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে: মাস্টারকার্ড

অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাব কমে আসছে, সেই সঙ্গে কমছে মূল্যস্ফীতির হার। এই বাস্তবতায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ভোক্তারা ২০২৪ সালে নিজেদের ইচ্ছা পূরণে আরও ব্যয় করতে পারবেন বা সেটা করার মতো অর্থ তাঁদের হাতে থাকবে।

মাস্টারকার্ড ইকোনমিকস ইনস্টিটিউট ২০২৪ সালের জন্য অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রকাশ করেছে। ‘ইকোনমিক আউটলুক: ব্যালান্সিং প্রাইসেস অ্যান্ড প্রয়োরিটিস’ বা ‘অর্থনৈতিক পূর্বাভাস: অগ্রাধিকার ও মূল্যের মধ্যে সমন্বয়’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে মাস্টারকার্ড বলেছে, মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমছে। ফলে মানুষের হাতে ব্যয় করার মতো অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে চীনা নাগরিকদের বিশ্বভ্রমণ আরও বাড়বে।


২০২৪ সালে করোনা মহামারির প্রভাব আরও কমে গেলে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষ বিনোদন ও ভ্রমণের মতো ইচ্ছা পূরণের খাতে আরও বেশি ব্যয় করতে পারবেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এই তুলনা করা হয়েছে ২০২২ ও ২০২৩ সালের সাপেক্ষে, যে দুই বছরে উচ্চ প্রবৃদ্ধির কারণে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতেই বেশির ভাগ অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হয়েছে। তখন মানুষের পক্ষে অতিরিক্ত ব্যয় করা সম্ভব ছিল না বা সেই সামর্থ্য কম ছিল।

মাস্টারকার্ডের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভিড মান বলেছেন, ২০২৪ সালে এই অঞ্চলের ভোক্তারা ব্যয়ের খাত পুনর্নির্ধারণ করবেন। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, মানুষ এখন ভ্রমণ ও বাইরে খাওয়ার বিষয়ে আরও আগ্রহী হচ্ছে, যদিও সব দেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি এক রকম নয়।

২০২৪ সালে ভোক্তাদের আচরণে আরেকটি পরিবর্তন আসবে বলে প্রত্যাশা করছে মাস্টারকার্ড। সেটা হলো, ২০২৪ সালে তারা আগের বছরের তুলনায় পণ্য বাবদ আরও বেশি ব্যয় করতে পারে। পণ্য উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্‌-মহামারি পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, যদিও ২০২২-২৩ সালে পণ্য কেনা বাবদ ভোক্তারা তেমন একটা ব্যয় করেননি। তখন কেবল মহামারির পর অর্থনীতি পুনরায় চালু হয়েছে—মানুষ ঘরের বাইরে খাওয়া বা এত দিনের পুঞ্জীভূত ভ্রমণের চাহিদা মেটাতেই বেশি ব্যস্ত ছিল।

২০২৪ সালে গৃহস্থালি পণ্য ও কাপড়ের চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা করছে মাস্টারকার্ড। এতে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উৎপাদন খাত চাঙা হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর বড় ভূমিকা রয়েছে। ২০২৩ সালে এই অঞ্চলের সেবা খাতে বড় প্রবৃদ্ধি হলেও উৎপাদন খাত পিছিয়ে ছিল। এবার দুই খাতের মেলবন্ধন হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবার পরিস্থিতি এক না হলেও আগামী বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মাঝারি ধরনের প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২৩ সালে তাদের যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, ২০২৪ সালেও সামগ্রিকভাবে তেমন হবে বলে ধারণা করছে মাস্টারকার্ড। ২০২৪ সালে এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে আরও স্থিতিশীলতা আসবে। প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি, অর্থাৎ রপ্তানি ও পর্যটনের মতো খাত প্রাক্‌-মহামারি সময়ের কাছাকাছি চলে যাবে।

সব দেশের প্রবৃদ্ধি যে একই রকম হবে, তা নয়। কোনো কোনো দেশের প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছরের চেয়ে বেশি হবে আবার কোনো কোনো দেশের প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের মতোই হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবৃদ্ধির হার আগামী বছর কিছুটা বাড়বে। অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের প্রবৃদ্ধির হার কমবে এবং ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশের প্রবৃদ্ধির হার ২০২৩ সালের মতোই থাকবে।