বিদ্যুৎ ও ব্যয়সাশ্রয়ী পণ্যে বেশি মনোনিবেশ করেছি
নানামুখী সংকটে এখন দেশের অর্থনীতি। এ সংকট যেমন সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যকে কঠিন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে। শিল্পকারখানাগুলো এখন খাবি খাচ্ছে সংকট মোকাবিলায়। একদিকে বাড়ছে উৎপাদন খরচ, অন্যদিকে কমছে বিক্রি। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এখন উদ্যোক্তাদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে সংকট সামাল দিচ্ছে, কী ধরনের কৌশল নিচ্ছে এবং সরকারের কাছে তাদের প্রত্যাশা কি—ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন শীর্ষপর্যায়ের পাঁচটি খাতের পাঁচজন উদ্যোক্তা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন সুজয় মহাজন, মাসুদ মিলাদ ও শুভংকর কর্মকার।
গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ওয়ালটন লোকসান করেছে। এ লোকসান হয়েছে মূলত ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায়। এখানে একটি কথা বলা দরকার, ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ওয়ালটনের কখনো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করা হতো না। বছরে লাভ-লোকসানের হিসাব করা হতো। এ কারণে ওয়ালটনের লোকসানের হিসাব ছিল না। এখন যখন ত্রৈমাসিক হিসাব করা হয়েছে, তাতে এক প্রান্তিকে লোকসান হয়েছে। তবে আশা করছি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তথা ডলারের দামের বড় ধরনের আর কোনো হেরফের না হলে বছর শেষে আবারও লাভে ফিরবে ওয়ালটন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিক্রি কিছুটা কমলেও আশা করছি, কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। গত প্রান্তিকে আমরা লোকসান করেছি মূলত ডলারের দামের সমন্বয়ের কারণে। সেই ধাক্কা আগামী ৯ মাসে অনেকটা কমে আসবে বলে আমাদের ধারণা। আশা করছি, গত কয়েক মাসে ডলারের দামের ক্ষেত্রে যে অস্থিরতা ছিল, সেটি আগামী দিনগুলোয় সহনীয় হয়ে উঠবে।
ডলার–সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যার সুফল আমরা আমদানিতে দেখতে পাচ্ছি। আমদানি অনেক কমে গেছে। আমি মনে করি, এ ক্ষেত্রে আমাদের আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। টেলিভিশন, ফ্রিজ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র বা এসিসহ যেসব পণ্য দেশে উৎপাদিত হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি সেগুলোর আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তাহলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। যেহেতু এসব পণ্যের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করার সক্ষমতা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রয়েছে, তাই আমি মনে করি, আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও তাতে কোনো সংকট হবে না।
এদিকে চলমান সংকট মোকাবিলায় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা নিজেরাও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যেগুলোর সুফলও ভবিষ্যতে আমাদের ব্যবসায় পড়বে, এমনকি দেশের অর্থনীতিও তাতে উপকৃত হবে। বর্তমানে আমরা ব্যয়সাশ্রয়ী তথা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী পণ্য তৈরিতে অধিক মনোনিবেশ করেছি। এ জন্য গবেষণায় বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পণ্য ব্যবহারের ফলে ভোক্তার বিদ্যুতের খরচ যেমন কমবে, তেমনি বিদ্যুতের চাহিদাও কমাতে সহায়তা করবে।
এ ছাড়া আমরা আমাদের কারখানায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের চাহিদা কমাতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে আড়াই মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে তা চার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। আর ২০২৩ সাল শেষে কারখানার বিদ্যুতের চাহিদার ১২ মেগাওয়াটও সৌরবিদ্যুৎ থেকে ব্যবহারের লক্ষ্যে কাজ চলছে। আমাদের এসব উদ্যোগ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সহায়তা করবে।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দেশীয় কোম্পানিগুলো অনেক দিন ধরে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পেয়ে আসছিল। সম্প্রতি সরকার তা তুলে নিয়ে পাঁচ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এমন একসময় এ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে, যখন ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার ধাক্কা লেগেছে। তাই আমরা চাই, পরিস্থিতি বিবেচনায় সাময়িক সময়ের জন্য হলেও এ ভ্যাট স্থগিত করা হোক। তাতে কোম্পানিগুলো কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। পরিস্থিতি আবারও স্বাভাবিক হয়ে এলে, তখন আবার এ ভ্যাট আরোপ করলে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।