বিপুল পরিমাণ সোনা আমদানি হচ্ছে ভারতে

সোনার বারপ্রতীকী ছবি: রয়টার্স

ভারতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল-ডিসেম্বর সময়ে সোনা আমদানি অনেকটা বেড়েছে। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যানে জানা যায়, এপ্রিল–ডিসেম্বর সময়ে ভারতের সোনা আমদানি ২৬ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি করা এই সোনার মোট মূল্য ৩৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময় সোনা আমদানি হয়েছিল ২৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বরে সোনা আমদানিতে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই এক মাসে ভারতের সোনা আমদানি বেড়েছে ১৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আমদানি করা সোনার অর্থমূল্য ৩০০ কোটি ডলার বলে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

এপ্রিল-ডিসেম্বর সময়ে ভারত সবচেয়ে বেশি সোনা আমদানি করেছে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড থেকে, আমদানি করা সোনার ৪১ শতাংশই এসেছে এই দেশ থেকে। এরপর আছে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত, সেখান থেকে আমদানি হয়েছে ১৩ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সে দেশ থেকে আমদানি হয়েছে ১০ শতাংশ।

ভারত প্রতিবছর যত পণ্য আমদানি করে, তার ৫ শতাংশই হচ্ছে এই মূল্যবান ধাতু। অর্থাৎ ভারতে সোনার বিপুল চাহিদা আছে। মূলত মানুষ গয়না হিসেবে সোনার ব্যবহার করেন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পরিসংখ্যান অনুসারে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সোনা ভারতীয় পরিবারগুলোর হাতে। শুধু ভারত নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে সোনার গয়না দেওয়ার চল রয়েছে। বিয়ে কিংবা মুখেভাত, এমনকি জন্মদিনেও সোনার গয়না দেওয়া হয়। নারীরা উত্তরাধিকার সূত্রেও গয়না পেয়ে থাকেন। ভারতে সোনা আমদানিতে বর্তমানে ১৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।

ভারতের চলতি হিসাবের ঘাটতির জন্য সোনা আমদানিকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। তবে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-ডিসেম্বর সময় ভারতের সোনা আমদানি অনেকটা বাড়লেও দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি কমে ১৮ হাজার ৮০২ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। এটা চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের হিসাব। আগের বছরের একই সময় বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২১ হাজার ২৩৪ কোটি ডলার।

এ সময় ভারতের সোনা আমদানি বাড়লেও রত্ন ও গয়না রপ্তানি ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছে। রপ্তানির অর্থমূল্য ছিল ২ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার।

ভারতের অন্যান্য গণমাধ্যম অক্সফোর্ড গোল্ড গ্রুপ ও ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য নিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন করেছে। অক্সফোর্ড গোল্ড গ্রুপ বলছে, বিশ্বে মোট যত সোনা সঞ্চিত আছে, তার ১১ শতাংশই রয়েছে ভারতীয় পরিবারগুলোর হাতে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যে জানা যায়, ২০২০-২১ সালে ভারতীয় পরিবারগুলোর কাছে প্রায় ১৩ হাজার টন সোনা ছিল। ২০২৩ সালে এই পরিমাণ অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। গত বছর ভারতীয় পরিবারগুলোর হাতে প্রায় আড়াই কোটি কেজি অর্থাৎ ২৫ হাজার টন সোনা ছিল। সোনার এই পরিমাণ ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির ৪০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, জার্মানি ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হাতে মোট যত সোনা আছে, তার চেয়ে বেশি সোনা ভারতীয় পরিবারগুলোর হাতে আছে বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ড গোল্ড গ্রুপের পরিসংখ্যান। তবে ভারতের মতো ওই সব দেশে গয়নার অতটা প্রচলন নেই। তাদের সোনার বড় অংশই রিজার্ভে রক্ষিত।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল-ডিসেম্বর সময়ে ভারতে সোনা আমদানির উচ্চ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে গোল্ড কাউন্সিলের এই তথ্যের সামঞ্জস্য আছে বলেই দেখা যাচ্ছে।