খেলনা উৎপাদন চীন থেকে সরানো খেলা কথা নয়

খেলনাছবি: রয়টার্স

চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে অন্য স্থানে নিতে নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছে খেলনা নির্মাতা কোম্পানিগুলো। চীনে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদকেরা সস্তা বিকল্প খুঁজছেন। কিন্তু চাইলেই যে এমন বিকল্প পাওয়া যায় না, সেটা তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ছয় বছর আগে জুতা কোম্পানি হাসব্রো চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে ভারতে আনতে এইকুস নামের এক সরবরাহকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা এইকুসকে সাবকন্ট্রাক্ট নেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

এইকুসের ভোক্তা বিভাগের প্রধান রোহিত হেজ রয়টার্সকে বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছিল, আমরা যদি খেলনা উৎপাদনে যেতে পারি, তাহলে চীন থেকে আমরা কোটি কোটি ডলারের উৎপাদন সরিয়ে ভারতে আনতে পারি।’ জবাবে রোহিত হেজ তাদের বলেছিলেন, ‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ১০ কোটি ডলারের ব্যবসা পেলে আমরা নিশ্চিতভাবেই এ শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারি।’

ছয় বছর পরে দেখা যাচ্ছে, এইকুস এখন হাসব্রো ও স্পিন মাস্টারের মতো কোম্পানির হয়ে খেলনা উৎপাদন করছে, বেলগ্রামে তাদের মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার বর্গফুটের দুটি কারখানা আছে।

কিন্তু বাস্তবতা এতটা মসৃণ নয়। রোহিত হেজসহ অন্য উৎপাদকদের অভিমত, উৎপাদন সক্ষমতার দিক থেকে ভারত বা অন্যান্য দেশ কোনোভাবেই চীনের সমকক্ষ নয়। ফলে তারা যে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে আনতে চাচ্ছিল, তা ব্যাহত হচ্ছে। চীনে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আগামী দিনেও যদি উৎপাদনের বড় একটি অংশ চীনে করতে হয়, তাহলে খেলনার দাম বেড়ে যাবে।

রোহিত হেজ বলেন, ‘চীনে যে ধরনের বন্দরসুবিধা পাওয়া যায়, ভারতে তা পাওয়া যায় না। চীনে যে ধরনের সড়কসুবিধা আছে, ভারতে তা নেই। চীন ৩০ বছর ধরে উৎপাদনে আছে, সে জন্য তাদের দক্ষতা আমাদের চেয়ে ভালো।’

তারপরও হাসব্রো ও বার্বি পুতুল উৎপাদক ম্যাটেল জানে, এককভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার সমস্যা কী। কোভিড-১৯-এর সময় তারা হাড়ে হাড়ে সেটা টের পেয়েছে। চীনে লকডাউনের কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলে তাদের সরবরাহব্যবস্থা ধসে পড়েছিল।

সেই সঙ্গে চীনের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হচ্ছে, বাড়ছে মজুরি। সে জন্য উৎপাদন ব্যয় কমাতে উৎপাদকেরা এখন বিশ্বের অন্যান্য স্থানে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছেন।

বিনিয়োগ যে চীন থেকে সরে অন্যান্য জায়গায় যাচ্ছে, তার ‍নজির এখন দেখা যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে রোডিয়াম গ্রুপের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভারতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন বিনিয়োগ ২০২১ ও ২০২২ সালে চার গুণ বেড়ে ৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। সেখানে ২০২২ সালে চীনে এমন বিনিয়োগ কমে ২ হাজার কোটি ডলারে নেমে এসেছে, ২০১৮ সালে যা ছিল ১২ হাজার কোটি ডলার।

অন্যান্য শিল্প চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সফল হলেও খেলনা উৎপাদকেরা অতটা সফল হচ্ছে না। গত বছরের প্রথম সাত মাসে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারের ৭৯ শতাংশ খেলনা চীনেই উৎপাদিত হয়েছে, ২০১৯ সালে যা ছিল ৮২ শতাংশ। তথ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান পাঞ্জিভার সূত্রে এ তথ্য পেয়েছে রয়টার্স।

অন্যদিকে ২০১৯ সালে ইউরোপ ও আমেরিকার পোশাক আমদানির ৩৫ শতাংশের উৎস ছিল চীন, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই মেয়াদে তা ৩০ শতাংশে নেমে আসে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা পেয়েছে ভারত ও মেক্সিকো।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে আমদানি করা খেলনার মাত্র ১ শতাংশ সরবরাহ করছে ভারত। গত পাঁচ বছরে এটুকুই তাদের অর্জন।

এমজিএ এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান নির্বাহী আইজাক লারিয়ান রয়টার্সকে বলেন, ভারতের সমস্যা হলো উদ্ভট নীতি। পরিস্থিতি এত জটিল যে এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে যেতে গেলেও নানা জটিলতার মুখে পড়তে হয়।

এসব সমস্যার কারণে ভারত খেলনার বাজার ধরতে পারছে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।