জুলাইয়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫%
সংকটে কিছুটা স্বস্তি রপ্তানিতে
গত মাসে ৩৯৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। কোরবানির ঈদের ছুটিতে গত মাসে অধিকাংশ কারখানা ৭-১০ দিন বন্ধ থাকাতেও রপ্তানি কিছুটা কমেছে।
ডলার-সংকটে অর্থনীতিতে একধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি খরচ কমানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জ্বালানিতে ভর্তুকি কমাতে লোডশেডিংয়ের মতো অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। যে মুদ্রা নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড, সেই ডলার অর্জনের প্রধান দুই উৎসের একটি প্রবাসী আয়, গত জুলাইয়ে ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ এসেছে। একইভাবে পণ্য রপ্তানিতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে গত মাসে। সামগ্রিকভাবে জুলাইয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাসে ৩৯৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৭ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। গতকাল মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তার এক দিন আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, জুলাইয়ে প্রবাসী আয় এসেছে ২০৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা গত ১৩ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
প্রবাসী আয়ের পর পণ্য রপ্তানিতে স্বস্তির সংবাদ এলেও দুশ্চিন্তাও রয়েছে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানকার মানুষ গাড়ির জন্য জ্বালানি ও নিত্যপণ্যের বাইরে কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। সে কারণে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ক্রয়াদেশ দেওয়া কমিয়ে দিচ্ছে। ক্রয়াদেশের পণ্য প্রস্তুত হওয়ার পরও জাহাজীকরণের অনুমতি দিচ্ছে না কোনো কোনো ক্রেতা। আবার গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে সময়মতো পণ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে খরচ।
ক্রয়াদেশ কমার প্রভাবে রপ্তানি কমতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। তারপরও জুলাইয়ে যে রপ্তানি হয়েছে, তা গত সাত মাসের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। অবশ্য তার একটা বড় কারণ হচ্ছে গত মাসে পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে অধিকাংশ কারখানা ৭-১০ দিন বন্ধ ছিল। অন্যান্য বছরও ঈদের মাসে রপ্তানি কম হয়। পবিত্র ঈদুল ফিতরের কারণে গত মে মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩৮৩ কোটি ডলারের পণ্য। সেই হিসাবে গত মাসে কিছুটা বেশি রপ্তানি হয়েছে।
বিদায়ী ২০২১–২২ অর্থবছর ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। তখন রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
গত মাসে পণ্য রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই পোশাক খাত থেকে এসেছে। মাসটিতে ৩৩৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। জুলাইয়ে ১৮৫ কোটি ডলারের নিট পোশাকের বিপরীতে ১৫১ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক রপ্তানি হয়েছে। ওভেনে প্রবৃদ্ধি ২৩ শতাংশ ও নিটে ১১ শতাংশ।
বিদায়ী অর্থবছর তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। নতুন বছরের প্রথম মাসে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি ৩৪ শতাংশ কমেছে। হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশে নেমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে গেছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যে ডলারের এই টানাপোড়েনের সময়েও পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকাটা ইতিবাচক। দুনিয়াজুড়ে শ্লথ প্রবৃদ্ধি থাকলেও আগামী দিনে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি থাকবে। তার কারণ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। আবার আমাদের এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির সময়েও চীনে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তার মানে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থানান্তরিত হচ্ছে। অন্য দেশ থেকেও ক্রয়াদেশ আসছে। সব মিলিয়ে তাই চলতি অর্থবছর শেষে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি থাকতে পারে।
গ্যাস–বিদ্যুতের সংকট নিয়ে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সামগ্রিকভাবে রপ্তানি খাতের কারখানার উৎপাদনের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সরবরাহের বিষয়টি সরকারকে স্থিতিশীল রাখতে হবে। যাতে করে বাংলাদেশের বাজার সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক কোনো ধারণা না পৌঁছায়।