কাতার থেকে ২০ বছর এলএনজি কিনবে ভারত, বাঁচবে ৬০০ কোটি ডলার

কাতার থেকে আরও এলএনজি কিনছে ভারতরয়টার্স

স্বল্প মূল্যে কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি করতে ভারত আগে যে চুক্তি করেছিল, সম্প্রতি তা নবায়ন করেছে দেশটি। আগামী ২০ বছরের জন্য এই চুক্তি নবায়ন করা হয়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার ধরে হিসাব করে দেখা গেছে, এই চুক্তির আওতায় যে গ্যাস আমদানি হবে, তাতে ভারতের প্রায় ৬০০ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে।

চলমান ইন্ডিয়া এনার্জি উইকের মধ্যে ভারতের বৃহত্তম গ্যাস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পেট্রোনেট এলএনজি ও কাতার এনার্জি এই চুক্তি নবায়নপত্রে সই করেছে। প্রাথমিকভাবে এই চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৮ সালে। চুক্তির মেয়াদে ভারত কাতার থেকে আনুমানিক ৭৫ লাখ টন এলএনজি আমদানি করবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার।

ভারত তার চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ গ্যাস আমদানি করে। তারা যত গ্যাস আমদানি করে, তার ৩৫ শতাংশই করে কাতার এনার্জির কাছ থেকে। ২০০৩-০৪ সাল থেকে কাতার এনার্জি ভারতের কাছে এলএনজি বিক্রি করছে। এই গ্যাসের দাম দুইভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত, একটি মূল্য কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছিল এভাবে যে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলে ১ ডলার করে বাড়লে এলএনজির দাম ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ হারে বাড়বে। সেই সঙ্গে প্রতি এমএমবিটিইউ গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয় ৫২ সেন্ট।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সূত্র জানিয়েছে, নতুন চুক্তিতে এই নির্ধারিত মূল্যের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে, যদিও কাঠামো প্রায় একই রকম আছে। বিদ্যমান চুক্তিতে গ্যাস পরিবহনের দায় ক্রেতার ওপর থাকলেও নতুন চুক্তিতে ভারতের এই পয়সা বেঁচে যাবে। কারণ, এখন থেকে ভারতের নির্ধারিত বন্দরে এই গ্যাস পৌঁছে দেবে কাতার এনার্জি। এতে ইউনিটপ্রতি ভারতের শূন্য দশমিক ৮ ডলার বেঁচে যাবে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হয়েছে, নতুন এই চুক্তির ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে, জ্বালানির বিশ্ববাজারে ভারতের প্রভাব কতটা বেড়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের অবস্থান গ্যাসের বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। সে কারণে তারা দীর্ঘ আলোচনা শেষে এ ধরনের কঠোর দর-কষাকষি করতে পেরেছে।

কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, এই আলোচনা যখন চলছে, তখন কাতারের এক আদালত আটজন সাবেক ভারতীয় নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে ইসরায়েলের পক্ষে গোয়েন্দাগিরির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এটাকে দোহার পক্ষ থেকে আলোচনা প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়েছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপের এলএনজি কেনা বেড়ে যাওয়ায় কাতার বিপাকে পড়েছে। এমন একসময় এই পরিবর্তন ঘটছে, যখন কাতারের গ্যাস তরলীকরণের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন তাদের বার্ষিক সক্ষমতা ৭ কোটি ৭০ লাখ টন, ২০২৭ সালে যা ১২ কোটি ৬০ লাখ টনে উন্নীত হওয়ার কথা। ফলে ভারতের পক্ষে জোর দর-কষাকষি করা সম্ভব হয়েছে।