এবার মার্কিন ও ইউরোপীয় পণ্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে চীন

চীনফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও তাইওয়ান থেকে যে প্লাস্টিক আমদানি করে চীন, সেই প্লাস্টিক উৎপাদনে এসব দেশ ভর্তুকি দিচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অ্যান্টিডাম্পিং তদন্ত শুরু করেছে চীন।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, পলিঅক্সিমিথালিন কোপোলাইমার আমদানিতে অ্যান্টিডাম্পিং তদন্ত করার যে ঘোষণা চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, ইউরোপ ও আমেরিকাকে ছেড়ে কথা বলবে না চীন। এই পলিঅক্সিমিথালিন কোপালাইমার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও গাড়িতে ব্যবহৃত হয়।

সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিবাদ আরও ঘনীভূত হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এক সপ্তাহেরও কম সময় আগে ওয়াশিংটন আবারও বৈদ্যুতিক গাড়ি, সৌর প্যানেল ও কম্পিউটার চিপের মতো চীনা পণ্যে বিপুল হারে শুল্ক বাড়িয়েছে। এ ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় চীনের পণ্যে যে পাইকারিভাবে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, নতুন ঘোষণায় তার আওতা আরও বাড়ানো হয়েছে।

ওয়াশিংটনের এই শুল্ক আরোপের ঘোষণায় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এই পদক্ষেপে দেশ দুটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চীনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক বিষয়ের রাজনৈতিকীকরণ করা হয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, নিজেদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থরক্ষায় তারা যেকোনো কিছু করবে।

ওয়াশিংটনের এই ঘোষণার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন গত সোমবার তিনটি মার্কিন প্রতিরক্ষা কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাইওয়ানে নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। ঠিক সেই সময় চীনের পক্ষ থেকে বলা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল অ্যাটোমিক্স অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমস, জেনারেল ডাইনামিক্স ল্যান্ড সিস্টেমস ও বোয়িং ডিফেন্স স্পেস অ্যান্ড সিকিউরিটি—এই তিন কোম্পানি চীনের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা করতে পারবে না।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনের পণ্যের বিরুদ্ধে লাগাতার তদন্ত করে যাচ্ছে। গত শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, এবার চীনের টিনপ্লেটযুক্ত ইস্পাতের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। গত মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তর থেকে বলা হয়, চীনের সৌর প্যানেলের বাজার নিয়ে তদন্ত করা হবে।

ইউরোপীয় কমিশন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যনীতি দেখভাল করে। তারাও বলেছে, চীনে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক আরোপ করা হবে কি না, তা নির্ধারণ করা হবে আগামী ৪ জুলাই।

চীন-মার্কিন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল ঘাটতি। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটা মূল সমস্যা নয়; এটা অনেক বড় সমস্যার লক্ষণমাত্র। বিশ্ববাণিজ্যে ভারসাম্যহীনতার জন্য মূলত দায়ী হলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রে সঞ্চয়ের তুলনায় বিনিয়োগ করে কয়েক গুণ বেশি; সে জন্য চীনের সঙ্গে তার বাণিজ্যঘাটতি কমলেও লাভ হবে না, তখন তাদের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ঘাটতি তৈরি হবে।

ট্রাম্প ও বর্তমান বাইডেন প্রশাসন অব্যাহতভাবে চীনের পণ্যে শুল্ক আরোপ করে যতটা বাণিজ্যঘাটতির সমাধান করতে চাইছে, তার চেয়ে বেশি চাইছে চীনের বিনিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের। ২০০০ সালে চীন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সদস্য হওয়ার পর অভাবনীয় উন্নতি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এখন দেশটিকে হুমকি মনে করে, সে জন্য চীননীতিতে ট্রাম্প ও বাইডেন প্রশাসনের মতভেদ নেই।