যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর যে ১০টি কোম্পানি ছিল সবচেয়ে লাভজনক

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে অ্যাপল

২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছরের মধ্যে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি হয়, সেই সঙ্গে শেয়ারবাজারের অবস্থাও ভালো ছিল না। তবে তার মধ্যেও দেশটির করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো রেকর্ড পরিমাণ মুনাফা করেছে।

ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট বলছে, নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মৌলভিত্তি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। নীতি সুদহার বৃদ্ধি ও মূল্যহ্রাসের চাপের মধ্যে উচ্চ মুনাফা এক ধরনের সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া নানা কারণে মুনাফা একটি কোম্পানির আর্থিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি।

ফরচুন ম্যাগাজিনের তথ্য ব্যবহার করে ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে লাভজনক কোম্পানিগুলোর তালিকা দিয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে লাভজনক কোম্পানি ছিল অ্যাপল। সেবার তারা ৯৯ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৯৮০ কোটি ডলার মুনাফা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক খাত ও জ্বালানি খাতের কোনো কোম্পানি তার ধারেকাছেও আসতে পারেনি। এ ছাড়া গত বছর তাদের মুনাফার হার ছিল ২৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন

স্মার্টফোনের বাজারে একধরনের স্থিতিশীলতা আসায় অ্যাপল এখন নানা ধরনের সেবায় বেশি জোর দিচ্ছে। আইফোনের বিক্রি তার মোট বিক্রির প্রায় অর্ধেক হলেও ফোনের বাজারের প্রবৃদ্ধির হার কমে আসছে। গত বছর আইফোন বিক্রির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশ, আগের বছর যা ছিল ৩৯ শতাংশ। তবে অ্যাপলের ক্লাউড, কেয়ার ও বিজ্ঞাপনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ।

মুনাফার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছে এক্সনমবিল। তবে অ্যাপলের চেয়ে অনেক দূরে তারা, মুনাফা করেছে ৫৫ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর তাদের মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪২ শতাংশ। এ ছাড়া করোনা মহামারির মধ্যে কোম্পানি ব্যয় কমানোর কারণেও মুনাফার হার বেড়েছে।

তৃতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান চেজ। সম্পদের দিক থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যাংক। তবে গত বছর তাদের মুনাফা আগের বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ কমেছে। মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। মুনাফা কমার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে আর্থিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে একীভূত হওয়ার হার কমেছে।

মুনাফা করার দিক থেকে চতুর্থ স্থানে ছিল ওষুধ কোম্পানি ফাইজার। তাদের মুনাফার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১৩০ কোটি ডলার। আলোচ্য বছরে তাদের মুনাফা ৪২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

পঞ্চম স্থানে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি ভেরাইজন কমিউনিকেশনস। তাদের মুনাফা অবশ্য ৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ২ হাজার ১৩০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। পরের জায়গাটি খুচরা পণ্য বিক্রেতা হোম ডিপো, মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭১০ কোটি ডলার।

বেশি মুনাফা করার তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল নানা ধরনের সেবা, বিশেষ করে আর্থিক সেবা দেওয়ার কোম্পানি ভিসা। তাদের মুনাফা ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, মুনাফার প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ২১ শতাংশ।

অষ্টম স্থানে গৃহস্থালি পণ্য প্রস্তুতকারক প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের মুনাফার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার, মোটরগাড়ি ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরিকারক কোম্পানি টেসলার ১ হাজার ২৬০ কোটি ডলার এবং পরিবহনের কাজে নিয়োজিত কোম্পানি ইউপিএসের মুনাফা ছিল ১ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। তালিকায় ইউপিএসের অবস্থান ছিল ১০ম।

এদিকে ফেডারেল রিজার্ভের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নিম্ন করহার ও সুদহারের কারণে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকভুক্ত ও আর্থিক খাত ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানির মুনাফা বেড়েছে। গত ২০ বছরে এসব কোম্পানি যত মুনাফা করেছে, তার এক-তৃতীয়াংশই হয়েছে এ কারণে।

কিন্তু এখন নীতি সুদহার বেশি হওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যয় বেড়ে গেছে। সে কারণে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার হার কমে যাবে, যদিও তারা বাড়তি খরচ ভোক্তার ওপর চাপাতে না পারে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি নীতি সুদহারের ধাক্কা ভালোভাবে সামলাতে পারছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা কমেছে ৫ শতাংশের সামান্য বেশি, যদিও অর্থনীতিবিদেরা ধারণা করেছিলেন, মুনাফা কমবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশের মতো।

এখন কথা হচ্ছে, এই পরিস্থিতির অর্থ কী। বিনিয়োগকারীরা সেই কোম্পানিতেই বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন, যারা উঁচু সুদহারের প্রভাব কাটাতে পারবে। সে ক্ষেত্রে বিবেচনা করার অন্যতম মানদণ্ড হচ্ছে মুনাফা। যেসব কোম্পানি মুনাফা ভালো, তারা যেমন পুনর্বিনিয়োগ ও লভ্যাংশ দিতে পারবে, তেমনি তারা প্রতিকূলতাও মোকাবিলা করতে পারবে ভালো।

এ ছাড়া যেসব কোম্পানি ভালো মুনাফা করে, তাদের বাজার হিস্যাও ভালো থাকে। ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকদের আনুগত্য থাকার কারণে সেই কোম্পানির পণ্যের চাহিদা বাড়ে—অ্যাপল ও ভিসার ক্ষেত্রে যা দেখা যায়, প্রতিযোগিতায় এরা এগিয়ে থাকে।

উচ্চ মুনাফার আরেকটি ভালো দিক হলো, এতে শেয়ারহোল্ডারদের মূল্য বাড়ে, আবার দীর্ঘ মেয়াদে শেয়ারের দামও ধরে রাখে তা।