ভারতের সঙ্গে শিগগিরই বাণিজ্য চুক্তি করছে না ব্রিটেন

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের শিগগিরই মুক্তবাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা নাকচ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। আগামী সপ্তাহে ভারতে অনুষ্ঠেয় জি–২০ সম্মেলন এবং সম্ভবত আগামী বছর ভারতের লোকসভা নির্বাচনের আগেও এই চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই এখন মনে করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্রের বরাতে বলেছে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী চটজলদি চুক্তির সম্ভাবনা খারিজ করেছেন; কারণ, দ্রুত করা একটি চুক্তির মাধ্যমে হুইস্কির মতো পণ্যে শুল্ক নির্ধারণের বিষয়টি সমাধান করা গেলেও পেশাদারি সেবার মতো জটিল বিষয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো সহজ নয়।

জি–২০ সম্মেলনে এই চুক্তির সম্ভাবনা তো নেই, এমনকি আগামী বছর দুই দেশের সাধারণ নির্বাচনের আগেও এই চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। তবে ভারত সরকারের অনেকে মনে করেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই চুক্তি হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের এক সরকারি সূত্র গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, ‘গত বছর আলোচনা হয়েছিল যে দিওয়ালির আগেই এই চুক্তি হবে। কিন্তু অল্প কিছু পণ্যের জন্যই একটি অগভীর চুক্তি কাজ করতে পারে। কিন্তু ঋষি সুনাক ও বাণিজ্যমন্ত্রী কেমি ব্যাডেনখ ঠিক করেছেন, তাঁরা এই পথে হাঁটবেন না। সে কারণে আলোচনার বিষয়বস্তু থেকে সময়সীমার বিষয়টি তুলে নেওয়া হয়েছে।’

আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি সূত্র বলেছে, ‘ভারত তাড়াতাড়ি পণ্যবিষয়ক চুক্তি করতে চায়। কিন্তু সমস্যা হলো, সেটা বৃহত্তর আলোচনার সূত্রপাত করে সেখানেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তখন যুক্তরাজ্যের মূল চাওয়া একটিও পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।’

ব্রেক্সিটের পর ভারতের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি ছিল যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় চাওয়া। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছিলেন, ব্রেক্সিটের পর ভারতের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হবে সবচেয়ে বড় ঘটনা।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, এই চুক্তি নিয়ে অনেক দিন ধরে আলোচনা হলেও তা চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়নি। বরিস জনসন ও তাঁর উত্তরসূরি লিজ ট্রাস উভয়েই বলেছিলেন, ২০২২ সালের দিওয়ালির মধ্যে চুক্তি হবে। সেই প্রতিশ্রুতির পরও এক বছর পেরিয়ে গেছে। আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্তরা বলছেন, এখনো অনেক বিষয়ে মতানৈক্য রয়ে গেছে।

কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট লর্ড করন বিলিমোরিয়া দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ভারত বিশাল এক দেশ, কিন্তু এই আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছে এবং এখনো কিছু বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারিনি। ভারত এখনো যুক্তরাজ্যের দ্বাদশ বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, অথচ তার স্থান আরও ওপরে থাকার কথা।’

আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সূত্রগুলো বলেছে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যেমন ভারত হুইস্কি ও গাড়ি থেকে শুল্ক তুলে নেবে এবং যুক্তরাজ্য টেক্সটাইল ও অন্যান্য ভারতীয় পণ্য থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করবে।

চলতি মাসের শুরুতে সানডে টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত স্কচ হুইস্কিতে এক-তৃতীয়াংশ থেকে শতভাগ শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা বলেছে। তবে বিনিময়ে তারা চায়, যুক্তরাজ্য নিজ দেশে ভারতীয় কর্মীদের কর ছাড় দেবে, যদিও ঠিক কী হারে তা করা হবে, সে বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ভারত নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের জন্য বাণিজ্য চুক্তি করেছে। যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা সেই বিবেচনায় মনে করেছিলেন, এ ধরনের সীমিত পরিসরের চুক্তি থেকে পরবর্তীকালে বৃহৎ পরিসরের চুক্তি করা যেতে পারে। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, ভারত বৃহত্তর চুক্তির বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সে কারণে এখন যুক্তরাজ্যের কৌশল হলো, আগেই চুক্তি না করে নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে ভারতের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা।

এদিকে সম্প্রতি হঠাৎ করেই কানাডা ভারতের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছে। আগামী সপ্তাহে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নয়াদিল্লি সফর করবেন। সেই সফরের ঠিক আগে আগে এই আলোচনা স্থগিত করা হলো। এ বিষয়ে কানাডার এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বাণিজ্য আলোচনা দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া। আমরা কোথায় আছি, তা বোঝার জন্য এই আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে।’