বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়িয়েছে আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)ছবি: রয়টার্স

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাস বৃদ্ধি করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে তারা প্রবৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের হালনাগাদ তথ্যে সেটা শূন্য দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়েছে সংস্থাটি।

 আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ১ শতাংশ; ২০২৫ সালের জন্যও তারা একই পূর্বাভাস দিয়েছে। এর আগে অক্টোবর মাসে তাদের পূর্বাভাস ছিল, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশে নামতে পারে, যা ঐতিহাসিক গড় হারের চেয়ে কম।

উন্নত ও উদীয়মান দেশগুলোর মধ্যে ২০২৪ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধির হার অর্জন করবে ভারত। আইএমএফের পূর্বাভাস, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। পরের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৪-২৫ সালেও ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

 ভারতের প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিলেও চীনের প্রবৃদ্ধির হার কমবে বলে আইএমএফের পূর্বাভাস। ২০২৪ সালের জন্য তারা চীনের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২৫ সালে যা আরও কমে ৪ দশমিক ১ শতাংশে নামতে পারে। আইএমএফের আনুমানিক হিসাব, ২০২৩ সালে চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, অর্থাৎ টানা দুই বছর চীনের প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পূর্বাভাস দিল আইএমএফ।

 এবারের হালনাগাদে বাংলাদেশবিষয়ক তথ্য প্রকাশ না করা হলেও অক্টোবর মাসের মূল প্রতিবেদনে আইএমএফ বলেছিল, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হবে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ শতাংশ।

চলতি বছর বিশ্বে মূল্যস্ফীতির হার কমবে। আইএমএফ বলছে, প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুতগতিতে মূল্যস্ফীতি কমছে। মূলত বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় অনুকূল পরিবর্তন আসার কারণে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশার তুলনায় দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। আইএমএফের সাম্প্রতিক হিসাব অনুসারে, মূল্যস্ফীতির হার প্রাক্‌–মহামারি পর্যায়ের কাছাকাছি চলে গেছে। ২০২৩ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের প্রকৃত মূল্যস্ফীতির হার অক্টোবর মাসে আইএমএফের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসের চেয়ে প্রায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কম ছিল বলে অনুমান করা হয়েছে।

 উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। সেই সঙ্গে উচ্চ সুদহারের কারণে বন্ধকের ব্যয় বেড়েছে, ঋণ পুনঃ অর্থায়নে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অনেক কোম্পানি। ঋণের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য দুর্বল হয়েছে। আবাসন খাত চাপের মধ্যে আছে। ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় মহামারি-উত্তর কাঠামোগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা জটিল করে তোলে। তবে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের সঙ্গে বাজার প্রত্যাশা করছে যে ভবিষ্যতে নীতি সুদহার কমবে।

এ ছাড়া উন্নত ও উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই দীর্ঘমেয়াদি ঋণের খরচ বেশি, অংশত যার কারণ সরকারি ঋণ বৃদ্ধি বলে মনে করছে আইএমএফ। তবে সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নীতি সুদহারের বিষয়ে একই রকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা নয়। যেসব দেশ একদম শুরুতে নীতি সুদহার বাড়িয়েছিল, তারা ২০২৩ সালের দ্বিতীয় ভাগ থেকে সুদহার কমাতে শুরু করেছে। চীনের মূল্যস্ফীতির হার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি, সে জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির রাশ আলগা করেছে। ব্যাংক অব জাপান স্বল্পমেয়াদি সুদহার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি রেখেছে।

 আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির আকাশ থেকে মেঘ কেটে যেতে শুরু করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন কারণে যা ধারণা করা হয়েছিল, অর্থাৎ বৈশ্বিক অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে, সেটা হয়নি। বরং বিশ্ব অর্থনীতিকে যদি উড়ন্ত বিমানের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে বলা যায়, নিরাপদ অবতরণের লক্ষ্যে বিমানটির উচ্চতা কমতে শুরু করেছে। গত এক বছরে মূল্যস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তারপরও বলা যায় না, অর্থনীতির পথ পুরোপুরি মসৃণ। প্রবৃদ্ধির হার কম, সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে যে ঝঞ্ঝা আসবে না, তা–ও হলফ করে বলা যায় না।

নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা দেখিয়েছে। আইএমএফ বলছে, চাহিদা ও সরবরাহের সামঞ্জস্য বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। চাহিদার দিক থেকে বলা যায়, আর্থিক খাতে নানা কঠোরতা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির বদৌলতে অর্থনৈতিক তৎপরতা চলমান ছিল। সরবরাহের দিক থেকে বলা যায়, শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সরবরাহ ব্যবস্থা সংশোধন এবং সস্তা জ্বালানি ও পণ্যের দাম অর্থনীতির জন্য অনুকূল হয়েছে ভূরাজনৈতিক নানা অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও।

 প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। প্রবৃদ্ধির হারও বাড়বে।