জুনের ৫ তারিখেই খেলাপি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার

রয়টার্স

নির্ধারিত সময়ের আগেই যুক্তরাষ্ট্রকে জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধি করতে হতে পারে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সম্ভাবনা আছে, স্বল্প মেয়াদের জন্য দেশটিকে ঋণের সীমা বৃদ্ধি করতে হবে।

গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষকদের উদ্ধৃত করে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় ‘এক্স-ডেট’ আসন্ন। অর্থাৎ, সেই সময় আর খুব বেশি দূরে নয়, যখন সরকারের পক্ষে সব বিল পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই সেই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ, জুনের আগে ঋণসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে মার্কিন সরকার খেলাপি হয়ে যেতে পারে। তাই আরও ঋণ নিয়ে সরকারের কার্যক্রম চালাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ মনে করছে, জুন মাসের ৫ তারিখের মধ্যেই সরকার আর আর্থিক দায় মেটানোর মতো অবস্থায় থাকবে না। তবে কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস বলেছে, সেই সময় আসতে পারে জুলাই ও সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে।

এদিকে গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি ব্যয় সংকোচনের প্রসঙ্গে বলেছেন, রিপাবলিকান দলের সদস্যরা হয়তো ঋণসীমা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ব্যয় হ্রাসের দাবি তুলবেন।

গতকাল মঙ্গলবার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কর দিবস। অর্থাৎ, সেদিন ছিল ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমার সময়। এরপর রাজস্ব বিভাগ বুঝতে পারে, তাদের হাতে ঠিক কত অর্থ আছে।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ঋণসীমা নিয়ে অস্বস্তি ও আরেকবার নীতি সুদহার বৃদ্ধির সম্ভাবনার কারণে এমনটা হয়েছে।

মার্কিন রাজস্ব বিভাগের প্রধান জন ম্যাডজিয়ির রয়টার্সকে বলেন, স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি সিকিউরিটির বাজারে একধরনের অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। কারণ, বিনিয়োগকারীরা স্বল্প মেয়াদে বন্ড না–ও কিনতে পারেন।

সোমবার পর্যন্ত পাওয়া রেফিনিটিভ ডেটার সূত্রে রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন সরকার ঋণ পরিশোধে খেলাপি হবে না, তা নিশ্চিত করার খরচ ২০১১ সালের তুলনায় বেড়েছে। সেবার ঋণের সীমা নির্ধারণ নিয়ে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়, তার জেরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঋণমান বা রেটিং প্রথমবারের মতো কমে যায়।

কোভিড মোকাবিলায় রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছে বিভিন্ন উন্নত দেশের সরকার। অনেক দেশের ঋণের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিকেও ছাড়িয়ে গেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণও রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে—৩১ লাখ কোটি ডলারের বেশি।

বিশ্বের প্রবল শক্তিধর রাষ্ট্রের রেকর্ড ঋণের আরেকটি কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ২০০৮ সাল থেকেই ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তারপর ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে করোনা মহামারি। তখন নাগরিকদের কয়েকবার আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের ফিসক্যালডেটা ডট ট্রেজারি ডট গভের তথ্যানুসারে, ২০০৭ সালে মন্দা শুরুর সময় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ছিল ৯ লাখ কোটি ডলারের বেশি। সেটা বাড়তে বাড়তে ২০ লাখ কোটিতে পৌঁছায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে। জো বাইডেনের আমলে সব মিলিয়ে ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ কোটি ডলারের বেশি।

তথ্য বলছে, ২০২২ সালের শেষে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত ঋণের সুদহার ছিল ২ দশমিক ০৭ শতাংশ, ২০১৯ সালের যা ছিল ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশটি ঋণ পরিশোধ করেছে ৩৮৪ বিলিয়ন বা ৩৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার, যা তাদের ফেডারেল বা কেন্দ্রীয় ব্যয়ের ১২ শতাংশ।

১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ ছিল জিডিপির ৩২ শতাংশ। ১৯৮১ সালের পর থেকে তা বাড়তে শুরু করে। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪ শতাংশ।