যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণসীমা বৃদ্ধির পক্ষপাতী ডোনাল্ড ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্র ঋণখেলাপি হোক, তা চান না দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে কারণে দেশটির জাতীয় ঋণসীমা বাড়ানোর পক্ষপাতী তিনি। ফ্লোরিডা রিসোর্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলার। দেশটির জাতীয় ঋণসীমা ৩৩ লাখ কোটি ডলার। ২০২৩ সালে ঋণসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে এ সীমা স্থগিত করা হয়। কিন্তু তার মেয়াদ ১ জানুয়ারি শেষ হয়ে যায়। এর পর থেকে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে খেলাপি হওয়া এড়ানোর চেষ্টা করছে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেন, ‘আমি দেখতে চাই না যে যুক্তরাষ্ট্র ঋণখেলাপি হোক; এটাই আমার একমাত্র চাওয়া।’
ঋণসীমা স্থগিতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয় এখন যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার কারণে আগামী কয়েক মাস ঠেকা কাজ চালানো যাবে। কিন্তু চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই ঋণসীমা বৃদ্ধিতে কংগ্রেসকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থার মূল বিষয় হচ্ছে ঋণ। দেশটিতে করহার বছরের পর বছর ধরে কমানো হয়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ ছাড়া। ফলে মার্কিন সরকার বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নেয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশের রিজার্ভ ডলারে সংরক্ষিত আছে। এটা মূলত ঋণ। বিভিন্ন বন্ডের মাধ্যমে সরকার এই ঋণ নিয়ে থাকে। দেশটির সরকার কত ঋণ নিতে পারবে, কংগ্রেসে তার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কিন্তু এই নির্ধারিত ঋণসীমা দিয়ে উদ্দিষ্ট কাজ হচ্ছে না বলে রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে।
এই ঋণসীমা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে সময় সময় অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে যে মার্কিন সরকার খেলাপ করতে পারে। সম্প্রতি কংগ্রেসে সরকারের ব্যয়সংক্রান্ত একটি অন্তর্বর্তী বিল উত্থাপিত হলে ট্রাম্প বাগড়া দেন। তাঁর দাবি, বাইডেন প্রশাসনের ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে কংগ্রেস ঋণসীমা বৃদ্ধি করুক বা এই সীমা একেবারে উঠিয়ে দেওয়া হোক।
কিন্তু ট্রাম্পের এই দাবি বাস্তবায়নের মতো ভোট রিপাবলিকানদের ছিল না। এ ছাড়া কয়েক সপ্তাহ ধরে কংগ্রেসের রিপাবলিক সদস্যদের সঙ্গে ট্রাম্পের আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেটা হলো, আইনি এজেন্ডাগুলো একক বড় বিলের মাধ্যমে পাস করা হবে, নাকি ছোট ছোট বিলে পেশ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩৯ সালে প্রথম জাতীয় ঋণসীমা নির্ধারিত হয় ৪৫ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। এরপর এখন পর্যন্ত ১০৩ বার এই ঋণসীমা বাড়াতে হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে দেশটির জাতীয় ঋণ অনুমোদিত সীমার ৯৮ শতাংশে উঠে যায়, ২০০১ সালে যা ছিল মাত্র ৩২ শতাংশ।
২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ধনীদের করছাড় দিয়েছিলেন। এরপর কোভিডের সময় মানুষকে প্রণোদনা দিতে মার্কিন সরকারকে বিপুল পরিমাণে ঋণ নিতে হয়েছে। এ কারণে গত কয়েক বছরে দেশটির ঋণ অনেকটা বেড়েছে। এখন ট্রাম্প আবার ধনীদের ছাড় দিলে রাজস্ব আয় কমবে। সেই চিন্তা থেকেই ট্রাম্প ঋণসীমা উঠিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।