পাকিস্তানের অর্থনীতি বাঁচাতে ৯০০ কোটি ডলার দিচ্ছে দাতারা

পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থা। দেশটিকে ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা। গত বছর ভয়াবহ বন্যা আঘাত হানে দেশটিতে। তাতে ১ হাজার ৭০০ মানুষের প্রাণহানি হয়। বাস্তুচ্যুত হয় ৮০ লাখের বেশি মানুষ। পাশাপাশি দেশজুড়ে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিকভাবে সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা দেশটির অর্থনীতিও চরম সংকটে পড়ে।

তাই দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার কাছে সহায়তা চায় দেশটি। তারই ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থা ৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও দেশটির সংকট মোকাবিলায় প্রায় ১ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চলমান অর্থনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে পাকিস্তান জাতিসংঘের সঙ্গে যৌথভাবে জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করেছে। এ সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নেওয়া। এ সম্মেলনের বৈঠকের এক ফাঁকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী আইএমএফের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যে কয়টি দাতা সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি), বিশ্বব্যাংক এবং সৌদি আরব। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ফ্রান্সও এ সহায়তায় অংশ নেবে। জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি। বেশ কয়েকটি সংস্থার কাছ থেকে বড় অঙ্কের সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর তিনি বলেন, ‘এমন প্রতিশ্রুতি আমাদের আশাবাদী করেছে। আমরা এ–ও মনে করি যারাই দুর্যোগে পড়বে, বিশ্ব তাদের পাশে দাঁড়াবে।’

এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পাকিস্তানকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে পুনরুদ্ধারে বড় বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান বিশ্ববাসীর প্রতি। জাতিসংঘ মহাসচিবের এ আহ্বানের পর বেশ কয়েকটি সংস্থা ও দেশ এগিয়ে আসে। তারা পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে জেনেভায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের পাশাপাশি ঋণদাতা বৈশ্বিক সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গেও বেলআউট বা পুনরুদ্ধার তহবিল নিয়েও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। কারণ, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ কমে এখন ৫৬০ কোটি ডলারে নেমেছে। গত বছরের তুলনায় দেশটির রিজার্ভ অর্ধেক কমে গেছে। তাতে নিত্যপণ্যসহ যেকোনো ধরনের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি। এ অবস্থায় পাকিস্তান আইএমএফের কাছ থেকে দ্রুত ঋণ সহায়তা চাইছে।

ডলার–সংকটের কারণে জ্বালানিসহ নিত্যপণ্য আমদানি করতে পারছে না পাকিস্তান। এমনকি জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী আমদানিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার যে মজুত রয়েছে, তা দিয়ে বড়জোর তিন সপ্তাহের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এ পরিস্থিতি জ্বালানি সাশ্রয়ে উদ্যোগী হয়েছে দেশটি। গত সপ্তাহে রাত আটটার পর সব বিপণিবিতান, দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার।