সুদ কী তা কেন জানেন না জাপানের তরুণ ব্যাংক কর্মীরা

প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

সুদের হারের হিসাব–নিকাশ করা বেশির ভাগ ব্যাংক কর্মীর নিত্যনৈমিত্তিক কাজেরই অংশ। তবে জাপানের একটি ব্যাংকের কর্মীদের এটি নতুন করে শিখতে হচ্ছে। কারণ, এই ব্যাংকের কর্মীরা জানেনই না সুদ আরোপ করে কীভাবে অর্থ ধার দিতে হয় কিংবা সুদের বিনিময়ে কীভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত নিতে হয়।

গত ৮ বছর ধরে জাপানে চালু ছিল ঋণাত্মক সুদের হার। ধনাত্মক সুদের হার সম্পর্কে তাই অনেক ব্যাংকার জানেনই না। অর্থাৎ সুদ যে দিতে হয় বা আদায় করতে হয়, তেমন ব্যাংকিং পরিবেশের সঙ্গেই তাঁরা পরিচিত নন। কিয়োটোর একটি আঞ্চলিক ব্যাংক তাই কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ব্যাংক অব কিয়োটোর ৩ হাজার ৩০০ কর্মীকে একটি ক্লাসে শেখানো হবে সুদের হার কেন গুরুত্বপূর্ণ, সুদের হার কীভাবে নির্ধারণ করা হয় এবং সুদের হার বেড়ে গেলে তা ব্যাংক ও তার গ্রাহকের ব্যবসাকে কীভাবে প্রভাবিত করে।

কিছু কিছু ক্লাস নেবেন ব্যাংকের বয়োজে৵ষ্ঠ নির্বাহীরা, যাঁদের সুদ আরোপের বিষয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা আছে, অর্থাৎ জাপানে যখন ধনাত্মক সুদের হার প্রচলিত ছিল, তখন থেকে তাঁরা ব্যাংকে কাজ করছেন। তাঁরা নতুনদের জানাবেন এটা কীভাবে কাজ করবে এবং ঋণ গ্রাহকেরা যাতে অতিরিক্ত অর্থ দিতে রাজি হয়, তা নিশ্চিত করতে কী ধরনের কলাকৌশল প্রয়োগ করতে হবে।

স্মার্টফোনের মাধ্যমে হবে এই প্রশিক্ষণ। একেকটি সেশন হবে ৩০ মিনিটের। তরুণ ব্যাংকাররা এই প্রশিক্ষণে শিখবেন আমানত সংগ্রহ করতে কীভাবে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হয়। এত দিন ধরে ব্যাংকগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থের ওপর রীতিমতো বসে ছিল এবং এই অর্থ তাদের জন্য ছিল বলা যায় এক রকমের দায়।

কয়েকটি সেশনে শেখানো হবে ঋণের সুদের হার বাড়ার বিষয়টি কীভাবে ঋণগ্রহীতাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে হবে এবং গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে কীভাবে আমানত সংগ্রহ করতে হবে।

ব্যাংক অব কিয়োটোর মানবসম্পদ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক তাদাশি শিমামোতো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটি খুবই সাধারণ প্রশিক্ষণ। কারণ, আমরা চাই আমাদের তরুণ কর্মীরা বুঝুক যে ধনাত্মক সুদের হারের জগতে বিষয়টি কীভাবে কাজ করে। তাঁদের বুঝতে হবে, সুদের হার বাড়লে বিষয়টি আসলেই অন্যরকম হবে।’

দশকের পর দশক ধরে জাপানে নীতি সুদহার হয় শূন্য শতাংশ কিংবা তারও নিচে আটকে ছিল। এর কারণ ছিল, দীর্ঘদিন ধরে চলা অতি নিম্ন মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা। সাধারণ আমানতকারীরা সামান্য সুদ পেতেন আর বাড়ির জন্য বন্ধকি ঋণের সুদ ছিল অসম্ভব রকমের কম।

তবে এক বছর ধরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। ব্যাংক অব জাপানের মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ শতাংশ। কিন্তু বর্তমান হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এরপর জাপান ঋণাত্মক সুদের হার থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০০৭ সালের পর এই প্রথম জাপানে সুদের হার বেড়েছে। এর ফলে ঋণদাতা ব্যাংক ও ঋণ গ্রহীতাদের তাদের পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হবে।

ব্যাংক অব কিয়োটো গত বছর ১৫০ জন নতুন স্নাতককে চাকরি দিয়েছিল। এই বসন্তে আরও ১৮০ জন নতুন কর্মী নেওয়ার পরিকল্পনা করছে ব্যাংকটি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের গোড়া থেকেই তাঁরা এই বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তখনই জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তারা ঋণাত্মক সুদের হারের নীতি বাদ দিতে চলেছে।

তাদাশি শিমামোতো বলেন, ‘আমাদের তরুণ কর্মীরা দেখেছেন, সুদের হার দীর্ঘ দিন ধরে শূন্য শতাংশে বহাল রয়েছে। তাই এই প্রথমবারের মতো তাঁরা দেখবেন যে সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। তাঁদের কাছে এটি এক অজানা জগৎ। সম্পূর্ণ নতুন এক জগৎ।’