বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো: ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কে যেভাবে শুল্ক ফাঁকির পথ বেরোচ্ছে

শুল্কের তালিকা দেখাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কযুদ্ধ শুরু করার পর নতুন বাস্তবতার সম্মুখীন হচ্ছে দেশটির কোম্পানিগুলো। সেটা হলো, কিছু মার্কিন কোম্পানি রহস্যজনক প্রস্তাব পেতে শুরু করেছে—এসব প্রস্তাবের শানে নজুল হলো, কর ফাঁকি দেওয়ার প্রলোভন দেখানো।

চীনভিত্তিক অনেক জাহাজ কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও গয়না আমদানিকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাদের প্রস্তাব, এমন কায়দাকানুন কর দেওয়া হবে যে চীন থেকে পণ্য আমদানি করলে শুল্কই লাগবে না।
মার্কিন এক আমদানিকারককে এক ই-মেইলে জানানো হয়, এমন ব্যবস্থা করা যাবে, যে তাদের পক্ষে উচ্চ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চীন থেকে পণ্য আমদানি করা সম্ভব—অতীতেও বহুবার এমন করা হয়েছে। অন্য একটি বার্তায় বলা হয়, মার্কিন শুল্ক এড়ানো সম্ভব এবং প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, মাত্র ১০ শতাংশ শুল্ক দিলেই চলবে। আরেক ই-মেইলে বলা হয়, শেষমেশ শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।

এই প্রস্তাবগুলো ই–মেইল ছাড়াও টিকটক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ছে এবং কোম্পানির নির্বাহী ও সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, এগুলো প্রতারণার নতুন পর্ব।

আমদানি পণ্যে নাটকীয়ভাবে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। এই চীনা কোম্পানিগুলোর দাবি, এসব কৌশল বৈধ। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তারা এমন উপায় বের করছে, যাতে খুব কম শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠানো যায়। এসব কৌশল শুল্ক জালিয়াতির পর্যায়ে পড়ে। এসব কোম্পানি হয়তো চালানের তথ্য পরিবর্তন করে শুল্ক কমায়, অথবা পণ্য অন্য কোনো দেশে পাঠিয়ে সেখানকার কম শুল্ক সুবিধা নিয়ে পরে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়—এই পদ্ধতিকে বলা হয় ট্রান্সশিপমেন্ট।

ট্রাম্প প্রশাসন চলতি মাসে বলেছে, তারা বাণিজ্য প্রতারণা, বিশেষ করে শুল্ক ফাঁকি প্রতিরোধে আরও গুরুত্ব দেবে। ভিয়েতনাম, মেক্সিকো ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় মার্কিন প্রশাসন বলেছে, তারা যেন নিজেদের প্রয়াস জোরদার করে। অনেক মার্কিন কোম্পানির মতে, অবৈধ কার্যক্রম এমন পর্যায়ে গেছে যে এসব দেশের পক্ষে তা প্রতিরোধ করার সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির নির্বাহী ও কর্মকর্তাদের মতে, এসব অবৈধ তৎপরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবছর শত শত কোটি ডলারের শুল্ক হারাচ্ছে। অন্যদিকে যেসব সৎ ব্যবসায়ী শুল্ক দেন, তাঁরা এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ—আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাঁরা। কিছু করা না হলে জালিয়াতরাই বিজয়ী হবে বলে মন্তব্য করেন গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী কোম্পানি প্লুজের নির্বাহী চেয়ারম্যান ডেভিড রশিদ—এসব অনৈতিক বাণিজ্য বন্ধে সরকারি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি।

এসব কনটেইনারে করে সারা পৃ্থিবীতে পণ্য আমদানি–রপ্তানি হয়।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

রশিদ নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, অনৈতিকভাবে আমদানি করা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ ব্যবস্থায় ঢুকে পড়েছে। মানুষের চোখে ধুলা দেওয়া সহজ, বিশেষ করে যখন মানুষ নিজেরাই চোখের ওপর ধুলার আস্তরণ রাখতে চায়।

বিষয়টি হলো, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক চালু হওয়ার পর থেকেই তা এড়ানোর জন্য বিভিন্ন কায়দা-কৌশল করা হচ্ছে। আমেরিকান উপনিবেশবাদীরা একসময় ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত বন্দরে পণ্য চোরাচালান করত, তখন থেকেই এর সূত্রপাত। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প পণ্য আমদানিতে শতাব্দীর সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপ করায় জালিয়াতি এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে বলে মনে করছে মার্কিন কোম্পানিগুলো। দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম কয়েক মাসেই ট্রাম্প বেশির ভাগ পণ্যে ১০ শতাংশ এবং ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়িতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। তিনি এই শুল্ক বাড়াচ্ছেন তো এই স্থগিত করছেন। ফলে বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। এপ্রিল মাসে ট্রাম্প চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও পরে তা ৯০ দিনের জন্য হ্রাস করেন। এ সময়টি ছিল আমদানিকারকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তখন কেউ কেউ ক্রয়াদেশ স্থগিত করেন, কিন্তু এর ফলে চীন থেকে জালিয়াতির নতুন ঢেউ শুরু হয় বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রায় চার দশক ধরে ব্যবসা করছেন লেসলি জর্ডান। তিনি বলেন, জালিয়াতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে—অনেক প্রতিষ্ঠান তাঁকে ও অন্য আমদানিকারকদের অবৈধ উপায়ে শুল্ক এড়াতে প্ররোচিত করছে। তিনি আরও বলেন, বহু বছর ধরেই চীনের রপ্তানিকারকেরা কারখানাগুলোকে শুল্ক ফর্ম বিকৃত করতে বলছে এবং তাদের দাবি, মার্কিন শুল্ক কর্মকর্তারা কখনো কনটেইনার খুলে দেখেন না, তাই ধরা পড়ার ভয় নেই। তিনি এসব প্রস্তাব সব সময় প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু উচ্চ শুল্কের কারণে এখন সৎ কোম্পানিগুলোর পক্ষে ব্যবসা করা কঠিন। ফলে অনেক চালানে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে।

জর্ডান আরও বলেন, ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক চীন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষের সুযোগসন্ধানী প্রতারকদের উৎসাহিত করছে। ফলে অনেক সৎ কোম্পানি প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েছে। মানুষ এটা নিতে পারছে না।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাই বলেন, শুল্ক এড়ানোর অবৈধ পথ খোঁজার বদলে বিদেশি রপ্তানিকারকদের উচিত, তাদের সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে আসতে বলা। শুল্ক আইনজীবী জন ফোট বলেন, প্রতারণার এই বাড়বাড়ন্তকে তিনি ‘উচ্চ শুল্ক যুগে প্রবেশের লক্ষণ’ হিসেবে দেখছেন। তিনি আরও বলেন, অনেক কোম্পানি তাঁকে নির্দোষ প্রশ্ন করছে—যেমন শুল্ক এড়াতে কিছু কায়দাকানুন করা যাবে কি না। প্রতিবারই তিনি বলেন, ‘না, এসব শুল্ক জালিয়াতি’ এবং প্রতিবার এই কথা বলার পরে কার্যালয়ের হোয়াইটবোর্ডে একটি করে দাগ দেন তিনি। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাঁর এই দাগসংখ্যা ছিল ১১।

নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, সাধারণত তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে পণ্যের শুল্ক ধার্য করা হয়। সেগুলো হলো পণ্যের ধরন, ঘোষিত ডলারের মূল্য ও উৎপত্তি দেশ। এই তিনটি উপাদান পরিবর্তনের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করা হয়। শিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটি প্রচলিত কৌশল হলো—পণ্যের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম মূল্য দেখানো। এতে শুল্ক কমে যায়, কারণ শুল্ক আরোপ করা হয় আমদানি মূল্যের নির্দিষ্ট শতাংশ হিসেবে।

আরেকটি কৌশল হলো—পণ্যের ভুল শ্রেণীকরণ করা। যেমন একজন আমদানিকারক সরকারকে জানাতে পারেন, একটি শার্টের চালান এমন উপাদানে তৈরি, যেসব উপাদানে শুল্ক কম। তৃতীয় কৌশল হলো—পণ্যটি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর আগে তৃতীয় দেশে পাঠানো, যেন সেখানকার কম শুল্কের সুবিধা নেওয়া যায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন চীনা পণ্যে কমপক্ষে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, তখন এই কৌশল বিশেষভাবে কার্যকর হয়ে ওঠে। কারণ, পাল্টা শুল্ক স্থগিত করার পর চীনের প্রতিবেশী দেশ যেমন ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার পণ্যে শুল্ক ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। ফলে শুল্ক এড়াতে চীনা পণ্য আগে ওই সব দেশে পাঠানো হয়, সেখান থেকে আবার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়।

কোনো পণ্য শেষমেশ কোথায় উৎপাদিত হচ্ছে, তার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করে। এই প্রক্রিয়া অবৈধ কি না, তা নির্ভর করে যে বিষয়টির ওপর তা হলো, ভিয়েতনাম বা মালয়েশিয়ায় পণ্যটির উৎপাদন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পন্ন হয়েছে কি না। উদাহরণস্বরূপ, চীনে তৈরি জুতার অংশ যদি মালয়েশিয়ায় সংযোজন করা হয়, তাহলে সেটি কারিগরি দিক থেকে মালয়েশীয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। শুধু পণ্যের উৎপত্তি দেশ গোপন করতে চীনে উৎপাদিত কোনো পণ্য যদি অন্য দেশের ভেতর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়, তাহলে বিষয়টি মার্কিন আইনের লঙ্ঘন।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আমদানিকারকদের কাছে পাঠানো এক বিজ্ঞাপনবার্তায় স্পষ্টভাবে এক কৌশলের কথা তুলে ধরা হয় ‘মালয়েশিয়া ট্রান্সশিপমেন্ট রুট: মালয়েশিয়ায় নতুন কনটেইনারে পুনরায় পণ্য ভরে মালয়েশীয় রপ্তানিকারকের সিও ব্যবহার করুন।’ এখানে সিও হলো সার্টিফিকেট অব অরিজিন বা পণ্যের উৎস।

এই প্রক্রিয়ার প্রকৃত মাত্রা নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ বিদেশি কারখানাগুলোর অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে মার্কিন সরকারের প্রবেশাধিকার সীমিত। এটি স্পষ্ট, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে চীনের ওপর শুল্ক আরোপ শুরুর পর থেকেই চীনে উৎপাদিত পণ্য, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর আগে তৃতীয় দেশে (যেমন মালয়েশিয়া) রপ্তানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ কমেছে, কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চীনের রপ্তানি ঠিক একই হারে বেড়েছে। এসব চীনা পণ্যের বড় অংশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্য দিয়ে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা এখন মেক্সিকোর বিষয়েও বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান এক্সিজারের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মেক্সিকোর তিন হাজারের বেশি কোম্পানি তাদের সরবরাহব্যবস্থার ৭৫ শতাংশ বা তার বেশি নির্ভর করে চীনের চালানের ওপর। এসব কোম্পানির মধ্যে অনেকগুলো চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সহায়ক প্রতিষ্ঠান এবং বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য বিক্রি করে।

এক্সিজার বলছে, এই জাহাজ পরিবহনের চ্যানেলগুলো চীনের কোম্পানিগুলোকে শুল্ক এড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সেই আইনগুলো এড়াতে সাহায্য করছে, যেসব আইন চীনে জোরপূর্বক শ্রম ব্যবহার রোধ কিংবা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি—এমন কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রণীত।

চীনের কিছু কোম্পানি এখন ডেলিভারড ডিউটি পেইড বা সংক্ষেপে ডিডিপি নামে নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক জালিয়াতির দায় থেকে আমদানিকারকেরা অনেকটাই রেহাই পান, এমনটাই দাবি করা হচ্ছে।

সাধারণ নিয়মে কোনো মার্কিন কোম্পানি চীনের কোনো কারখানা থেকে পণ্যের মালিকানা কিনে নেয় এবং এরপর নিজ খরচে যুক্তরাষ্ট্রে এনে শুল্ক দেয়। কিন্তু ডিডিপি পদ্ধতিতে পুরো বিষয়টি উল্টোভাবে হয়। এই পদ্ধতিতে চীনা কোম্পানির হাতেই পণ্যের মালিকানা থাকে এবং তারাই সমুদ্রপথে তা যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর সেই কোম্পানিই শুল্ক পরিশোধ করে এবং তারপর মার্কিন ক্রেতার হাতে তুলে দেয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ফলে মার্কিন কোম্পানি জানে না, পণ্যের শুল্ক ঠিকমতো দেওয়া হয়েছে কি না। মার্কিন সরকার এ ধরনের শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে দেখা যায়, এই চীনা কোম্পানি কেবল নামেই আছে, বাস্তবে তার অস্তিত্বই নেই। ফলে জরিমানা আদায় বা দায় চাপানোর মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

মার্কিন ব্যবসায়ীরা অবশ্য মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য এ ধরনের কৌশল এখনো ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’। তাঁরা মনে করেন, এই পদ্ধতিতে হয়তো কোনো মার্কিন ক্রেতার আইনি দায় কিছুটা কমতে পারে, কিন্তু তাঁদের পুরোপুরি দায়মুক্তি দেয় না, বিশেষ করে যখন বাণিজ্যের শর্তগুলো শুল্ক জালিয়াতি ছাড়া বাস্তবায়নই সম্ভব হতো না। অটোমোবাইল খাতের নির্বাহী ক্রিস্টোফার কারনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলো কার্যত শাস্তির ভয় করে না। এখানে সবকিছুই অনেক দূরের বিষয়—যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনে গিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করবে, এমনটা কেউ ভাবছে না।

ইঁদুর-বিড়াল খেলা

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা সরকারের বাণিজ্য ও শুল্ক জালিয়াতি নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা নিয়ে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই বিষয়কে অগ্রাধিকার দিলেও বাস্তবে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।

শার্লট পাইপ অ্যান্ড ফাউন্ড্রির মতো কোম্পানিগুলো এই জালিয়াতির কারণে ভুক্তভোগী হচ্ছে। তাদের অভিজ্ঞতা বলছে, বিদেশি কোম্পানিগুলো সহজেই শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে। অন্য দেশের মাধ্যমে পণ্য পাঠিয়ে কিংবা ভুয়া কোম্পানি খুলে এই জালিয়াতি করা হচ্ছে। এই প্রবণতা ‘হ্যাক-এ-মোল’ খেলার সঙ্গে তুলনা করেছেন ব্যবসায়ীরা, অর্থাৎ একটা বন্ধ করলে আরেকটা চালু হয়।

সমালোচকদের মতে, বর্তমান ব্যবস্থা ‘অস্বচ্ছ ও প্রতারণামূলক’। বিদ্যমান পদ্ধতি কেবল প্রতিক্রিয়াশীল নয়, বরং প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ শুল্ক আদায়ে সাফল্যের কথা বললেও ব্যবসার মূল সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।

মার্কিন কংগ্রেসের কাছে শিল্প নেতাদের আহ্বান, তারা যেন এই খাতে আরও বেশি সম্পদ বরাদ্দ করে। সেই সঙ্গে কঠোর ফৌজদারি শাস্তি নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি করেছেন তাঁরা। তাঁদের চাওয়া, পদ্ধতিগত সমাধান সূত্র বের করতে হবে, যে ব্যবস্থা বাণিজ্য জালিয়াতির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।