এক হাজার কর্মী আর ৩৫০ গাড়ি নিয়ে আমিরাতে প্রাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ

দুবাই, আবুধাবি, শারজাহসহ পুরো সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত বছরে প্রায় ২৫ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন প্রতিষ্ঠান প্রাণ। বাংলাদেশের মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে ১৫ কোটি ডলারের পণ্য আনা হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে। বাকি পণ্য বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করে দেশটিতে তাদের পণ্যের ব্যবসা উন্নয়নে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইমার্জিং ওয়ার্ল্ড গ্রুপ।

বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রথম পণ্য রপ্তানি শুরু করে ২০০৭ সালে। ইমার্জিং ওয়ার্ল্ড গ্রুপ তিনটি কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে দুবাইয়ে শুরু করে প্রাণের পণ্য সরবরাহ। এ কাজ এতটাই বেড়ে যায় যে মাত্র তিন মাসের মধ্যে কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা ১৫টিতে উন্নীত করতে হয়। আর এখন পুরো দেশে সাড়ে ৩০০ কাভার্ড ভ্যান শুধু প্রাণের পণ্য সরবরাহ করার কাজ করছে। আর পণ্য আমদানি ও সংগ্রহে কাজ করছেন এক হাজার কর্মী।

আজমান শিল্প এলাকায় ইমার্জিং ওয়ার্ল্ড গ্রুপের ওয়ারহাউস ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে থরে থরে সাজানো রয়েছে আমদানি করা প্রাণের পণ্য।

সকাল থেকে লম্বা সারি করে কাভার্ড ভ্যানগুলো পণ্য নিয়ে বের হয়। প্রতিটি বাহন প্রাণের পণ্যের হলুদ স্টিকার দিয়ে সজ্জিত, গায়ে বড় করে ইংরেজিতে লেখা প্রাণ। একই রঙের হওয়ায় দেশটিতে আলাদা নজর কাড়ে এসব গাড়ি, প্রচার পায় প্রাণের পণ্য। পণ্য সরবরাহের কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রবাসী কর্মী, তবে সঙ্গে রয়েছেন ভারত ও পাকিস্তানের কর্মীরাও।

ইমার্জিং ওয়ার্ল্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ভালো মান ও স্বাদের কারণে প্রাণের পণ্য সহজেই আমিরাতে বাজার ধরতে পেরেছে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ১৫ লাখ মানুষের প্রায় সবাই প্রাণের পণ্যের গ্রাহক। এ ছাড়া অন্য দেশের গ্রাহকও দ্রুত বাড়ছে এবং এই সংখ্যা সামনে আরও বাড়বে।

দুবাই ও আজমানে হাইপার মার্কেট ক্যারিফোর, নেস্টো, লুলু ও আল মদিনার একাধিক শাখা ঘুরে দেখা গেছে, এসব দোকানে প্রাণের খাদ্যপণ্য সাজানো রয়েছে। তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে জুস, সস, মুড়ি, মসলা, নুডলস, চকলেট, বিস্কুট, হিমায়িত মাছ, তেল, মধু, ডাবের পানি, খাবার পানিসহ নানা খাদ্য ও পানীয় পণ্য। আর ক্রেতার তালিকায় বাংলাদেশিদের পাশাপাশি রয়েছেন ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশের মানুষ।

পুরো সংযুক্ত আরব আমিরাতে ক্যারিফোরের প্রায় ৮০টি, নেস্টোর ৫০ ও লুলুর প্রায় ১৭৫টি শাখা রয়েছে। ক্যারিফোরের একটি স্টোরের ব্যবস্থাপক সনৎ কুমার জানান, প্রায় ১৩ বছর ধরে তাঁরা প্রাণের পণ্য বিক্রি করছেন। তাঁদের স্টোরে প্রায় দেড় শ রকমের পণ্য রয়েছে। গ্রাহক সন্তুষ্টি ভালো হওয়ায় প্রাণের পণ্য বিক্রি বাড়ছে।

প্রাণ বিশ্বে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে। চলতি ২০২৩ সালে তাদের লক্ষ্য রপ্তানি আয় ৪০ কোটি ডলারে উন্নীত করা। গত বছর প্রাণ প্রায় ৩৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল।

দুবাইয়ে চলমান গালফ ফুড ফেয়ারে উপস্থিত হয়ে নিজেদের নানা রকম খাদ্যপণ্য ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যেহেতু সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০ শতাংশ মানুষই বাংলাদেশ থেকে আসা প্রবাসী, তাই দেশের মতো এখানেও প্রাণের পণ্য জনপ্রিয় হয়েছে।

আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, তাঁর কোম্পানি সব দেশেই প্রাণের পণ্যের বাজার তৈরি করতে চায়। প্রাণের পণ্য এখন ১৪৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে; ভবিষ্যতে ২০০টি দেশে রপ্তানি করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি সামনের বছরগুলোতে আরও বাড়বে।