রাশিয়ার জব্দ হওয়া সম্পদের আয় ইউক্রেনকে দেওয়া হবে

রাশিয়াছবি: রয়টার্স

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাশিয়ার জব্দ করা আর্থিক সম্পদ থেকে যে আয় হচ্ছে, সেই অর্থ এবার ইউক্রেনকে যুদ্ধসহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে। শিগগিরই এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ইতালির স্ট্রেসাতে অনুষ্ঠিত জি–৭-এর অর্থমন্ত্রীদের বেঠকে রাশিয়ার ২৮ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রাপ্ত আয় ব্যবহারের নতুন পথ খোঁজা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন শুরু করলে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার এসব সম্পদ জব্দ করে।

সেই বৈঠকের পর শনিবার ইতালির অর্থমন্ত্রী জিয়ানকার্লো জিওর্জেতি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ ক্ষেত্রে মূল বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে। যদিও তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে কিছু আইনি জটিলতা আছে; শিগগিরই এসব সমস্যার সমাধান করা হবে।

জিয়ানকার্লো জিওর্জেতি আরও বলেন, এ বিষয়ে জি–৭ দেশগুলোর রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী।

কয়েক সপ্তাহ আগে হঠাৎই ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়া হামলা চালানোর পর জি–৭-এর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাশিয়া সেখানেই থেমে নেই, দেশটি আক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধি করছে। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়ছে আর পশ্চিমা নেতাদের ওপর চাপও বাড়ছে, ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দিতে হবে।

এদিকে গত মঙ্গলবার জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন বলেছেন, রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার পথ বের করতে পশ্চিমাদের যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জরুরি তাগিদ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার যে প্রস্তাবটি মার্কিন ও ইউরোপীয় নেতাদের সবচেয়ে মনঃপূত হয়েছে, তা হলো ইউক্রেনকে ৫০ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার কোটি ডলার ঋণ দেওয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাশিয়ার যে সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, তা জামানত হিসেবে ব্যবহার করে যে বড় অঙ্কের মুনাফা করা হবে ভবিষ্যতে, সেই অর্থের একাংশ আগাম সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐকমত্য অনুসারে, রাশিয়ার সম্পদ থেকে প্রাপ্ত সুদের ২৭০ কোটি থেকে ৩৩০ কোটি ডলার প্রতিবছর কিয়েভকে দেওয়া হবে। আগামী জুলাই মাসে প্রথম কিস্তি দেওয়া হবে; এর বড় একটি অংশ দেওয়া হবে সামরিক সহায়তা হিসেবে।

পরিকল্পনা হলো, ইউক্রেনকে যে সম্পদ ঋণ হিসেবে দেওয়া হবে, তা থেকে প্রাপ্ত সুদ যুদ্ধের জন্য ব্যয় করা হবে। চলতি সপ্তাহে স্কাই টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনেট ইয়েলেন বলেন, ইউক্রেনের এখন বিপুল অর্থের চাহিদা। এ পরিস্থিতিতে সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে যুদ্ধসহায়তা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

আগামী মাসে ইতালিতে জি–৭-এর শীর্ষ বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে যেন কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়, তা নিশ্চিত করতে জি–৭–এর দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

তবে রাশিয়ার সম্পদ পুরোপুরি অধিগ্রহণ করার চিন্তা জি–৭-এর পরিকল্পনায় নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ হলো, সেটা করা হলে অন্যান্য দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে রিজার্ভ রাখতে নিরুৎসাহিত হবে। রাশিয়ার যত সম্পদ জব্দ হয়েছে, তার সিংহভাগই ইউরোপে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ডলারের পর বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা।

সিএনএনের ভাষ্যমতে, রাশিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ অস্থাবর সম্পদ বা ২২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ইউরোপীয় ইউনিয়নে জব্দ করা হয়েছে। এই অর্থের বড় অংশ আবার বেলজিয়ামভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউরোক্লিয়ারে সংরক্ষিত।