যুক্তরাজ্যে বড় কর্তাদের বেতন বেড়েছে ১৬ শতাংশ, শ্রমিকেরা এখনো চাপে

ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের বড় কোম্পানিগুলোর বড় কর্মকর্তাদের বেতন অনেকটাই বেড়েছে। সেই তুলনায় সাধারণ শ্রমিক ও কর্মীদের বেতন তেমন বাড়েনি, বরং তাঁরা মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হয়েছেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান দ্য হাই পে সেন্টারের তথ্যমতে, গত বছর যুক্তরাজ্যের বড় কর্মকর্তাদের বেতন বেড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ।

শেয়ারবাজারের সূচক এফটিএসই ১০০ আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের বার্ষিক গড় বেতন ২০২১ সালে ছিল ৩৩ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ড, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৯ লাখ ১০ হাজার পাউন্ড। অথচ দেশটির সাধারণ একজন কর্মীর বার্ষিক বেতন ৩৩ হাজার পাউন্ড। অর্থাৎ প্রধান নির্বাহীর বেতন দেশটির সাধারণ কর্মীদের বেতনের ১১৮ গুণ বেশি। খবর বিবিসির।

হাই পে সেন্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, গত বছর সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী ছিলেন ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী স্যার প্যাসকেল সোরিয়ট। তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল ১ কোটি ৫৩ লাখ ইউরো। কোম্পানিটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কোভিড ১৯-এর টিকা তৈরি করে বেশ পরিচিতি লাভ করে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন নিরাপত্তা ও মহাকাশ সংস্থা বিএই সিস্টেমের চার্লস উডবার্ন, যাঁর বার্ষিক বেতন ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনপ্রাপ্ত নারী প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন এমা ওয়ালমসলে, যার বেতন ৮৪ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। তিনি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যতম বড় জ্বালানি উৎপাদক শেলের সাবেক প্রধান নির্বাহী বেন ভ্যান বেউর্ডেনের বাৎসরিক বেতন ছিল ৯৭ লাখ পাউন্ড এবং আরেক বড় জ্বালানি কোম্পানি বিপির প্রধান নির্বাহী বের্নার্ড লুনির বার্ষিক বেতন ছিল ১ কোটি পাউন্ড।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালে ব্রিটেনের ব্লু চিপ কোম্পানি সূচকের সূত্রে এবং কোম্পানিগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদনের আলোকে প্রধান নির্বাহীদের বেতন বিশ্লেষণ করেছে। সেখানে দেখা যায়, ২০২০ সালে প্রধান নির্বাহীদের গড়পড়তা বেতন কমে ২৪ লাখ ৬০ হাজার হলেও ২০২১ সাল থেকে বেতন বাড়ছে, সেই বছর যা প্রায় ৫ লাখ ইউরো বেড়েছে। তারা বলছে যে লকডাউনের পর কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার পুনরুদ্ধার, শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ও মুনাফা বাড়াতে প্রধান নির্বাহীদের উৎসাহ দিতে প্রণোদনা হিসেবে বেতন বাড়ানো হয়েছে। তারা বলছে, লকডাউনের পর কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি ও লাভ বাড়াতে প্রধান নির্বাহীদের উৎসাহ দিতে প্রণোদনা হিসেবে প্রধান নির্বাহীদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। যদিও ২০১৭ সালের বার্ষিক বেতনের তুলনায় যা এখনো কম, সেবার তা ৩৯ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড ছুঁয়েছিল।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোম্পানির নির্বাহীদের সঙ্গে অন্যান্য কর্মীর বেতনের পার্থক্য বেড়েছে।

তীব্র বৈষম্য

এ বিষয়ে ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস বা টিইউসি বলেছে, ‘ব্রিটেন এক অদ্ভুত বৈষম্যপূর্ণ দেশ।’ টিইউসির সাধারণ সম্পাদক পল নোভাক বলেন, ‘আমাদের এমন অর্থনীতি দরকার, যেখানে শুধু শীর্ষ কর্তাদের নয়, সবার জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হবে।

অর্থনৈতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অ্যাডাম স্মিথ ইনস্টিটিউট বলেছে, ‘প্রধান নির্বাহীদের বেতন নিয়ে এ ধরনের আক্রমণে লাভ হবে না, বরং তাদের মত, বৃহত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

এদিকে প্রতিবেদনটির প্রতিক্রিয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, প্যাসকেলের বেতনের মাত্র ১২ শতাংশ নির্ধারিত, বাকি ৮৮ শতাংশ শেয়ারের মূল্য ও কার্যকারিতার ওপর নির্ভর করে। তারা আরও বলছে, তাদের শেয়ারের দাম গত ৫ বছরে বেড়েছে ৮১ শতাংশ। তবে অন্যান্য বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় তাদের প্রধান নির্বাহীর বেতন কম বলে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রোজেনেকা।

আরেকটি বিষয় হলো, গত বছর বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা থাকলেও তেল কোম্পানিগুলো তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপুল মুনাফা করেছে। সে কারণে তেল কোম্পানির কর্তাদেরও বেতন বেড়েছে। এ নিয়ে অবশ্য অনেক সমালোচনা হয়েছে।

বড় কর্তাদের বেতন বাড়লেও গ্যাস, বিদ্যুৎ ও খাদ্যের ক্রমবর্ধমান দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমিক ও সাধারণ কর্মীদের মজুরি বাড়েনি। এই বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যদিও ২০২২ সালে অক্টোবরে তা ১১ দশমিক ১ শতাংশে উঠেছিল।

যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস বা ওএনএসের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশটিতে মজুরি বেড়েছে গড়ে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, কিন্তু মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নেওয়া হলে তা শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমে যায়।