ইসরায়েলের ওপর তেল নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবে সাড়া মিলছে না কেন

সমুদ্রপথে রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ।

হামাসের হামলার পর গাজায় যে সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল, তার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে এক দাবি উঠেছে। সেটা হলো তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ইসরায়েলকে শাস্তি দেওয়া, বিশেষ করে ওপেক সদস্য ইরানের পক্ষ থেকে এ দাবি উঠেছে।

এই পরিস্থিতির সঙ্গে বিশ্লেষকেরা ১৯৭৩ সালের ওপেকের নিষেধাজ্ঞার তুলনা করছেন। সেবার আরব-ইসরায়েলের যুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি মিত্র দেশ, যেমন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল।

বিশ্লেষক ও ওপেকের সূত্রগুলো রয়টার্সকে বলেছে, আজকের পরিস্থিতি ৫০ বছর আগের মতো নয়। তাদের মতে, নতুন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা কম।

এই পরিস্থিতিতে আগামী রোববার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো ভিয়েনায় বৈঠক করছে। সেখানে তেলের উৎপাদন নিয়ে আলোচনা হবে। সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ওই বৈঠকে মূলত তেলের উৎপাদন হ্রাস নিয়ে আলোচনা হবে।

গত মাসে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আবদুল্লাহিয়া ইসরায়েলের ওপর তেল নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা দিতে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশনকে (ওআইসি) আহ্বান জানান।

সেই সঙ্গে ওআইসিভুক্ত সব দেশ থেকে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কারের আহ্বান জানান তিনি।

ওপেকের চারটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইরানের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক কোনো উদ্যোগ নেওয়া বা জরুরি বৈঠক করার পরিকল্পনা নেই।

এদিকে গত রোববার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনি মুসলিম দেশগুলোর প্রতি এক আহ্বানে বলেছেন, যাদের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক, তারা যেন ‘সীমিত সময়ের’ জন্য হলেও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে। এর সপ্তাহখানেক আগে তিনি ইসরায়েলের ওপর তেল ও খাদ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে ১১ নভেম্বর রিয়াদে অনুষ্ঠিত ওআইসি ও আরব লিগের এক বৈঠকে মুসলিম দেশগুলো ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অনুরোধে ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিতে সম্মত হয়নি।

১৯৭৩ সালে কী হয়েছিল

১৯৭৩ সালে আরব–ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন করলে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ওপেক যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তী সময়ে তেল উৎপাদন কমিয়ে নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য ও জাপানের মতো দেশকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হয়।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্র তেলের সংকটে পড়ে। দেশটির তেল ও গ্যাস স্টেশনে মানুষের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যায়, যদিও দীর্ঘ মেয়াদে এই সংকটের কারণে তেলের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করা হয়।

এখন কেন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা কম

অর্ধশতাব্দী আগে, অর্থাৎ সেই ১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমা দেশগুলো ছিল আরব অঞ্চলের তেলের মূল ক্রেতা, কিন্তু সেই বাস্তবতা আর নেই। এখন ওপেকের তেলের মূল ক্রেতা এশিয়া। সংস্থাটির সদস্য দেশগুলো যত তেল রপ্তানি করে, তার ৭০ শতাংশ আমদানি করে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।

ওপেকের একটি সূত্রের মতে, ৫০ বছর আগের তুলনায় এখনকার ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ভিন্ন। সে জন্য এখন নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা কম।

এক নোটে জে পি মর্গ্যান বলেছে, এখনকার বাস্তবতা ১৯৭০-এর দশকের মতো নয়। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে এখন যে অর্থনৈতিক পরিবর্তন চলছে, তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি স্থিতাবস্থা ও শান্তি, সংঘাত ও সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যের উন্নতির জন্য সহায়ক নয়।

নিষেধাজ্ঞার বাস্তবতা না থাকার আরেকটি কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র এখন বৃহত্তম তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। তাদের বিশাল পেট্রোলিয়াম মজুত ভান্ডারও আছে।

সে জন্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাস্তবতা পাল্টে গেছে; জ্বালানি জগতের বাস্তবতা বদলে গেছে।