হুমকির মুখে পাকিস্তানের পণ্য আমদানি, চিকিৎসা বন্ধ এক হাসপাতালে

পাকিস্তান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার কমে দাঁড়িয়েছে ৫৮০ কোটি ডলারে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। তাতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশটির পণ্য আমদানি। বর্তমানে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৫৬০ কোটি মার্কিন ডলারে।

এত কম পরিমাণ রিজার্ভ দেশটির পণ্য আমদানির অর্থায়নকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাইরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় ৫৮০ কোটি ডলার মজুত রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পরিমাণ বর্তমানে ১ হাজার ১৪০ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার এ মজুত দিয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের আমদানি নিষ্পত্তি করা সম্ভব বলে মনে করছেন আমদানিকারক ও অর্থনীতিবিদেরা।

করাচিভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা টপলাইন সিকিউরিটিজের প্রধান মোহাম্মদ সোহেল বলেন, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে দেশটি ঋণখেলাপি হয়ে যেতে পারে। আর সেটি হলে বৈদেশিক ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে।

রাজনৈতিক সংকটের কারণে এমনিতেই ভেঙে পড়েছে পাকিস্তানের অর্থনীতি। এর মধ্যে বৈশ্বিক সংকটের কারণে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে দেশটির মূল্যস্ফীতি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৈশ্বিক জ্বালানিসংকট ও ভয়াবহ বন্যার ধাক্কা।

সর্বশেষ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে পাকিস্তানের রিজার্ভ কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ, ওষুধ, খাদ্য, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দায় শোধ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

করাচি বন্দরে হাজার হাজর পণ্যবাহী কনটেইনার আটকে আছে। কারণ, ব্যাংকগুলো বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। কনটেইনারে আটকে থাকা এসব পণ্যের মধ্যে পচনশীল খাদ্যপণ্য ও কোটি ডলারের সমমূল্যের নানা ধরনের চিকিৎসার সরঞ্জামও রয়েছে।

পাকিস্তানের হেলথকেয়ার ডিভাইস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদ আহমেদ বলেন, যন্ত্রপাতির অভাবে করাচির বড় একটি চক্ষু হাসপাতাল এক মাস ধরে চোখের কোনো অপারেশন করতে পারছে না।

দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থানে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান সরকার। এ অবস্থায় বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের কাছ থেকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণের বিষয়ে নতুন করে আবার আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এ ঋণ পেতে হলে পাকিস্তানকে জ্বালানির ভর্তুকি বন্ধ করে দিতে হবে। জ্বালানির ভর্তুকি বন্ধের শর্তেই পাকিস্তানকে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখিয়েছে আইএমএফ।

এদিকে সংকট মোকাবিলায় জ্বালানি খরচ কমাতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ গত মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছেন, দেশটির সব বিপণিবিতান রাত সাড়ে ৮টায় বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানের হলগুলো ফাঁকা করতে হবে রাত ১০টার মধ্যে।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভা মঙ্গলবার ‘ন্যাশনাল এনার্জি ইফিসিয়েন্সি অ্যান্ড কনজারভেশন প্ল্যান’ পাস করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, জ্বালানি খরচ কমাতে রেস্তোরাঁও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বণিক সমিতির প্রতিনিধিরা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেননি।

তবে এরপরও সরকার দোকানপাট দ্রুত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সরকারি দপ্তরগুলোকে বিদ্যুৎ খরচ ৩০ শতাংশ কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।