এ মাসেই মহাকাশে ভার্জিনের বাণিজ্যিক উড়ান শুরু

মহাকাশ পর্যটন কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাকটিক চলতি জুন মাস শেষ হওয়ার আগেই তাদের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট তথা উড়ান চালু করবে।
ছবি: ভার্জিন গ্যালাকটিক

যুক্তরাজ্যের বিলিয়নিয়ার তথা শতকোটিপতি স্যার রিচার্ড ব্র্যানসনের মহাকাশ পর্যটন কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাকটিক চলতি জুন মাস শেষ হওয়ার আগেই তাদের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট তথা উড়ান চালু করবে। প্রতিষ্ঠানটি ২৭ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে উড়ান শুরু করবে। আর এই উড্ডয়নের নাম দেওয়া হয়েছে গ্যালাকটিক জিরো ওয়ান। খবর বিবিসির

এদিকে মহাকাশে ভ্রমণ আয়োজনের ঘোষণা দিতে না দিতেই পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের কাছে ভার্জিন গ্যালাকটিকের শেয়ারের চাহিদা বেড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের বর্ধিত লেনদেনে ভার্জিন গ্যালাকটিকের শেয়ারের দাম একলাফে ৪০ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

রিচার্ড ব্র্যানসন (ছবিতে ডান থেকে দ্বিতীয়) গত শতকের সত্তরের দশকে ভার্জিন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন।
ছবি: ভার্জিন গ্যালাকটিক

কয়েক মাস আগে রিচার্ড ব্র্যানসনের মালিকানাধীন ভার্জিন গ্রুপের পৃথক মহাকাশ সংস্থা ভার্জিন অরবিটের একটি মিশন ব্যর্থ হয়। ফলে গত মাসে ভার্জিন অরবিট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটি ছোট আকারের স্যাটেলাইট স্থাপনসেবা দিত।

ভার্জিন গ্যালাকটিক জানিয়েছে, তাদের প্রথম ফ্লাইট, মানে উড্ডয়নটি হবে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা মিশন। মাইক্রোগ্র্যাভিটি গবেষণা পরিচালনার জন্য ইতালির বিমানবাহিনী ও সেই দেশের জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের তিন ক্রু সদস্যকে বহন করবে ভার্জিন গ্যালাকটিক।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, আগস্টের শুরুতে তারা মহাকাশে দ্বিতীয় বাণিজ্যিক উড়ানের আয়োজন করবে। আর তখন থেকেই তারা মহাকাশে মাসিক উড়ান, মানে স্পেস ফ্লাইট চালিয়ে যাওয়ার আশা করছে।

বাণিজ্যিক রকেটে চড়ে পৃথিবী থেকে ৮০ কিলোমিটার বা ২ লাখ ৬০ হাজার ফুট ওপরে উঠতে চান, এমন ৮০০ ব্যক্তি ইতিমধ্যে ভার্জিন গ্যালাকটিকের টিকিট কিনেছেন।
ছবি: ভার্জিন গ্যালাকটিক

বর্তমানে ভার্জিন গ্যালাকটিকের বয়স ১৯ বছর। এই সময়ে ভার্জিন গ্যালাকটিককে একাধিক দুর্ঘটনার ধকল ও কারিগরি ত্রুটিজনিত নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে সফলতাও আছে। যেমন ভার্জিন গ্যালাকটিকের ‘ইউনিটি’ নামের রকেট প্লেন প্রায় দুই বছর পর গত মাসে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। এটি দুজন পাইলট ও চারজন যাত্রী নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউমেক্সিকো মরুভূমি থেকে মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল।

বাণিজ্যিক রকেটে চড়ে পৃথিবী থেকে ৮০ কিলোমিটার বা ২ লাখ ৬০ হাজার ফুট ওপরে উঠতে চান, এমন ৮০০ ব্যক্তি ইতিমধ্যে ভার্জিন গ্যালাকটিকের টিকিট কিনেছেন। মহাকাশভ্রমণে তাঁদের জনপ্রতি খরচ হবে সাড়ে ৪ লাখ মার্কিন ডলার, যা বর্তমানে বাংলাদেশের ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার মতো।

স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন মে মাসে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, করোনা মহামারি ও লকডাউন বা বিধিনিষেধ চলাকালে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এয়ারলাইন তথা বিমান ও পর্যটনসংক্রান্ত ব্যবসায় প্রায় ১৫০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ডের সমপরিমাণ অর্থ লোকসান দিয়েছেন।

রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন আমি ভেবেছিলাম আমরা সবকিছু হারাব।’ যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর বিলিয়নিয়ার স্ট্যাটাস, অর্থাৎ শতকোটিপতির মর্যাদা ধরে রাখতে পেরেছেন। সানডে টাইমস রিচ লিস্ট বা অতিধনীর তালিকায় বর্তমানে তাঁর সম্পদের মূল্য ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ২৪০ কোটি পাউন্ড বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিনের রিয়েলটাইম ওয়ার্ল্ডস বিলিয়নিয়ার লিস্ট বা বৈশ্বিক শতকোটিপতি তালিকা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার তাঁর সম্পদের নিট মূল্য ছিল ৩০০ কোটি ডলার।

রিচার্ড ব্র্যানসন গত শতকের সত্তরের দশকে ভার্জিন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই গ্রুপের অধীনে ৪০টির বেশি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির কার্যক্রম বিস্তৃত আছে বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশে।