বিপুল ঋণ পুনর্গঠনে শ্রীলঙ্কাকে প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি ঋণদাতারা

চরম অর্থনৈতিক–রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যেসব কোম্পানির কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণদাতাদের একটি কমিটি দেশটির ঋণ পুনর্গঠনের একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। এটি তাদের প্রথম প্রস্তাব, যেটি শ্রীলঙ্কার কাছে পাঠানো হলো। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা এসব বেসরকারি আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের কাছে বন্ড বিক্রি করেছিল। সরকারের কাছে তাদের মোট পাওনা এখন ১২ বিলিয়ন বা ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় গত বছর শ্রীলঙ্কা খেলাপি হয়ে পড়ে।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কা খেলাপি হওয়ার পর ঋণদাতারা এই প্রথম দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ঋণদাতাদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা সরকারের বৈঠক হয়েছে। সেখানে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে ঋণদাতারা ঋণ পুনর্গঠনে যে প্রস্তাব দিয়েছে, সে প্রস্তাব সম্পর্কে বিশদ কিছু জানা যায়নি।

মোট ৩০টি বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অ্যামানডি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ব্ল্যাকরক, এইচবিকে ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, টি রো প্রাইস অ্যাসোসিয়েটস।

শ্রীলঙ্কাকে যেসব দেশ ঋণ দিয়েছে, তাদের জোট পরিচিত প্যারিস ক্লাব হিসেবে। এ ক্লাবের সদস্যদেশগুলো বলেছে, তারাও শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠন করতে চায়। সে লক্ষ্যে ফ্রান্স, জাপান ও ভারতের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতিনিধিও সে কমিটিতে আছেন।

তবে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা দেশ চীন এসব প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হয়নি, যদিও শ্রীলঙ্কার দুর্দশা ঘোচাতে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাংক ও আইমএফের সদ্য সমাপ্ত বসন্তকালীন বৈঠকের সময় আয়োজিত এক সেমিনারে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার গভর্নর ই গাঙ এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমরা যদি পরস্পরকে সহযোগিতা করি, এ দায় যদি আমরা সমান ও ন্যায্যভাবে ভাগ করে নিতে পারি, তাহলে সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। স্বাভাবিকভাবেই এই বিপুল ঋণ শোধ করা তার জন্য এখন কঠিন। এ বাস্তবতায় গত মার্চে শ্রীলঙ্কা ১০ বছরের জন্য বৈদেশিক দেনা পরিশোধ স্থগিতের আহ্বান জানায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ২৯০ কোটি ডলারের একটি সম্ভাব্য আর্থিক পুনরুদ্ধার ঋণ পাওয়ার ঠিক আগে দেশটি এ আহ্বান জানিয়েছিল।

তবে আইএমএফের ঋণ পেতে শ্রীলঙ্কাকে যথারীতি অনেক শর্ত মানতে হয়েছে। চলতি বছর ইতিমধ্যে এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়েছে। গত বছরও বিদ্যুতের দাম ৭৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। এ কারণে গত বছর দেশটির মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। এ বছর তা গড়ে ৫১ শতাংশের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। সেই সঙ্গে মানুষের ওপর আয়করের বোঝা বেড়েছে। বড় দুর্দশায় রয়েছে দেশটির জনগণ।