ভারত এবার চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবছে
গম, চাল ও পেঁয়াজের পর ভারত এবার চিনি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। আর এটি করা হচ্ছে দেশটিতে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে। ভারতের ভোক্তাবিষয়ক অধিদপ্তরও এ ধরনের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমসের
নিষেধাজ্ঞার আলোচনার বিষয়টি সম্পর্কে জানেন, এমন এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, আউটবাউন্ড শিপমেন্ট বা রপ্তানিতে বিধিনিষেধ কিংবা খুব সীমিত কোটা থাকতে পারে। তবে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না এ বিষয়ে।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে ভারতে চিনির মৌসুম শুরু হবে। পরিস্থিতি বুঝে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ভারত চিনি রপ্তানির অনুমতি দেওয়া বা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এর আগে ২০১৬ সালে ভারত সর্বশেষ চিনি রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ দিয়েছিল। সে বছর চিনি রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল দেশটি।
স্ট্যাটিস্টা ডট কমের তথ্যানুযায়ী, ভারত বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ চিনি রপ্তানিকারক দেশ। গত ২০২২–২৩ অর্থবছর দেশটি থেকে ৬৫ লাখ টন চিনি রপ্তানি হয়েছে। শীর্ষ দুই চিনি রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ব্রাজিল ও থাইল্যান্ড।
গত আগস্টে ভারতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুলাই মাসে ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ থেকে নেমে আগস্টে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ, জুলাইয়ের তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা এখনো অনেক বেশি।
এদিকে আগস্ট মাসে ভারতে স্বল্প বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতির খবরও পাওয়া গেছে। যেমন দেশটির অন্যতম প্রধান চিনি উৎপাদক রাজ্য মহারাষ্ট্রে গত আগস্টে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৬ শতাংশ কম হয়েছে। এতে রাজ্যটির নির্দিষ্ট কিছু এলাকা চরম খরার মধ্যে পড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে ভারতের চিনি উৎপাদন গতবারের চেয়ে ৩ শতাংশ কমে ৩ কোটি ১৭ লাখ টন হতে পারে।
এসব কারণে আগস্ট থেকে ভারতে চিনির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। অবশ্য এর আগে ভারতের খাদ্যসচিব সঞ্জীব চোপড়া জানিয়েছিলেন, দেশে ৮৫ লাখ টন চিনি মজুত রয়েছে, যা সাড়ে ৩ মাসের জন্য যথেষ্ট। এর ফলে আসন্ন উত্সব মৌসুমে চিনির দাম বাড়বে না। যদিও বাজারে দাম বেড়েছে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার চিনিশিল্পের সব অংশীদারদের জন্য বাধ্যতামূলক মজুতের পরিমাণ প্রকাশের আদেশ জারি করে। পাশাপাশি সেপ্টেম্বর মাসের জন্য নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত ১৩ লাখ টন চিনি বাজারে ছাড়ার ব্যবস্থা করেছে।
সরকার আশা করছে, আসছে মৌসুমে চিনির উৎপাদন কিছুটা কমলেও বাজারে ঘাটতি হবে না। বরং দাম নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ নিশ্চিতে রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের কথা ভাবছে দেশটি।
অবশ্য শুধু চিনি নয়, ভারতের বাজারে অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়তি। এর পেছনে বাহ্যিক কারণও রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে বিশ্ববাজারে গমসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। এতে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহের খরচও বেড়ে যায়। তাতে ভারতের মতো উৎপাদক দেশের ওপরে বাড়তি চাপ পড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে চলতি বছর গম, চাল ও পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারত। যেমন অভ্যন্তরীণ মজুত ধরে রাখা ও দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে গত আগস্ট মাসে সেদ্ধ চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। এর আগে গত জুলাই মাসে অবাসমতী সাদা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি।
অন্যদিকে জুলাই মাসে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারত। আর গত বছরের মে মাসে গম রপ্তানির ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল দেশটি।