জ্বালানিতে বিপুল ভর্তুকির প্রস্তাব যুক্তরাজ্যে

আগামী বছরের এপ্রিল মাস থেকে যুক্তরাজ্যে জ্বালানির বার্ষিক ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৪ হাজার ৪০০ পাউন্ড।

ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানির খরচ মেটাতে গিয়ে জেরবার হচ্ছে যুক্তরাজ্যের স্বল্প আয়ের মানুষ। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ হলেও যুক্তরাজ্য ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানির দাম একদম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়নি। জ্বালানির দামের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে তারা। এ বাবদ আগামী দুই বছর ১০০ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হতে পারে বলে এক হিসাবে দেখা গেছে।

এদিকে গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেম অক্টোবর মাস থেকে প্রযোজ্য মূল্যসীমা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাস থেকে বার্ষিক হিসেবে জ্বালানি ব্যয় বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩ হাজার ৫৮২ পাউন্ড, বর্তমানে যার পরিমাণ ১ হাজার ৯৭১ ডলার। এখানেই শেষ নয়, আগামী বছরের এপ্রিল মাস থেকে জ্বালানির বার্ষিক ব্যয় দাঁড়াতে পারে ৪ হাজার ৪০০ পাউন্ড। খবর দ্য গার্ডিয়ানের

পরিবারের জ্বালানি ব্যয় সীমার মধ্যে রাখতে স্কটিশ পাওয়ার কোম্পানি এক পরিকল্পনা পেশ করেছে। এই পরিকল্পনার আওতায় পরিবারের জ্বালানি ব্যয় বাড়তে না দিতে দাম বর্তমান পর্যায়ে স্থির রাখার কথা বলা হয়েছে। বাজারমূল্য ও ভোক্তামূল্যের মধ্যে ব্যবধান, তা মেটাবে সরবরাহ কোম্পানিগুলো। তবে নিজের টাকায় তারা সেটা করবে না, এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে যে বেইল আউট প্যাকেজ প্রণয়ন করেছে, সেখান থেকে তারা ঋণ নেবে আর তা দিয়ে ঘাটতি মেটাবে।

তবে শেষ বিচারে এই অর্থ ভোক্তাদেরই বহন করতে হবে। আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মেয়াদে এই অর্থ জনগণের কাছ থেকেই তোলা হবে, তারা একদিকে ঋণ করে এই অর্থ পরিশোধ করতে পারে, আবার অতিরিক্ত বিল প্রদানের মাধ্যমেও তা পরিশোধ করতে পারে।

যুক্তরাজ্যে এই মুহূর্তে কোনো প্রধানমন্ত্রী নেই। আগামী এক মাসের মধ্যে সে দেশে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। কিন্তু দুই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত নন। তাঁরা মনে করেন, জ্বালানির দাম স্থির করে দেওয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। এটাকে স্বল্পমেয়াদি সমাধান আখ্যা দিয়ে তাঁরা বলেন, এতে অন্তর্নিহিত সমস্যার সমাধান হবে না।

প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ও যুক্তরাজ্যের সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, এই প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি ভীত। আরেক প্রার্থী লিজ ট্রাসও এই পরিকল্পনার সঙ্গে একমত নন।

গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত নিবন্ধে যুক্তরাজ্যেরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন দেখিয়েছেন, এক লাফে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কীভাবে সেই দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘জ্বালানি-দারিদ্র্য’। দেখিয়েছেন, কীভাবে এ কারণে হীনম্মন্যতায় ভোগা প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। অনেক মা-বাবা টাকার অভাবে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন না। এসব শিশু অন্য শিশুদের সঙ্গে মিশতে সংকোচ বোধ করছে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এতে ১ কোটি পরিবারের ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ জ্বালানি-দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়েছে।

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় যুক্তরাজ্যসহ সব উন্নত দেশেই মূল্যস্ফীতি আকাশ ছুঁয়েছে। জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশ পেরিয়েছে। অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশ এবং আগামী বছর জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ১৯ শতাংশে উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে সেখানকার ৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ জ্বালানি-দারিদ্র্যে পড়বে। গর্ডন ব্রাউন মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যর্থ হওয়া রাজনীতিকদের সমালোচনা করে বলছেন, ক্ষমতার কেন্দ্রে যাঁরা থাকেন, মানুষের প্রতি তাঁদের নিষ্ঠুরতা শুধু অযোগ্যতা ও অসংবেদনশীলতা নয়, অনৈতিকও বটে।