ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রভাব
বিশ্ব বাজারে দ্বিতীয় সপ্তাহেও বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম
মধ্যপ্রাচ্যে হামাস-ইসরায়েলের সংঘাতের জেরে দ্বিতীয় সপ্তাহের মতো মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে বেড়েছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম। আজ শুক্রবার প্রথম কয়েক ঘণ্টায় পর্যন্ত বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৫ সেন্ট বেড়ে ৯৩ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড প্রতি ব্যারেল ৯০ ডলার ৭১ সেন্ট হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
হামাস ও ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং তাতে বিশ্বের শীর্ষ-উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে সরবরাহ সংকট হতে পারে—এমন আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা বিচলিত হয়ে পড়েছেন। বাজারে তার প্রভাব পড়েছে এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে।
বিশ্লেষক টনি সাইকামোর রয়টার্সকে বলেন, বড় উদ্বেগের বিষয় হল যে এই সপ্তাহান্তে গাজায় আইডিএফ (ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী) প্রবেশের বিষয়ে আমরা উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছি। এর অর্থ হলো অপরিশোধিত তেলের দাম আরও বাড়তে পারে।
হামাস গত ৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবে ইসরায়েলে হামলা চালায়। এর জেরে গাজাজুড়ে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ চলছেই। জাতিসংঘ জানায়, গাজায় গত দেড় সপ্তাহের বেশি সময়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৮৫। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ১ হাজার ৫২৪ শিশু রয়েছে। আহত হয়েছেন সাড়ে ১২ হাজারের বেশি মানুষ।
ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরদিন থেকেই বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। এরপর তা কিছুটা কমে গত শুক্রবার আবার বৃদ্ধির ধারায় ফেরে। এরপর গত সোমবার তা ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
ইসরায়েল জ্বালানি তেলের বড় উৎপাদক নয়। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে সৃষ্ট সংঘাতে নিকটবর্তী দেশগুলোর সরবরাহে কী প্রভাব পড়তে পারে, তা মূল্যায়ন করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার পর্যবেক্ষকেরা। সমুদ্রপথে বিশ্বের তেল বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির আরও কারণ রয়েছে। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দুই শীর্ষ উৎপাদক সৌদি আরব ও রাশিয়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ হ্রাসের কথা জানিয়েছিল। এর প্রভাব পড়ছে বাজারে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বৃদ্ধি পায়। তখন নিজ দেশের ভোক্তাদের স্বস্তিতে রাখতে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ থেকে জ্বালানি তেল বাজারে ছাড়তে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এতে তাদের রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ কমেছে। সেই রিজার্ভ আবার পূরণ করতে আগামী ডিসেম্বর ও জানুয়ারির মধ্যে নতুন করে ৬০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পেছনে এটিও একটি অনুঘটক।
গাজায় সংঘাতের জেরে ইরানের ওপর নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি যদি ইরানের তেল রপ্তানির ওপর কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে ইরানের তেল উৎপাদন কমবে এবং দাম আরও বাড়বে।
অন্যদিকে রাশিয়া থেকে তেল ক্রয়ে বেঁধে দেওয়া দাম প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলার লঙ্ঘন করার কারণে সম্প্রতি সরবরাহকারী দুটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন অর্থ বিভাগ। রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদক ও প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। ফলে ইসরায়েলের সংঘাতের পাশাপাশি এসব ঘটনাও আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়াতে প্রভাবক হতে পারে।