মূল্যস্ফীতির কারণে কমে যাচ্ছে মার্কিনদের পেনশন বাবদ সঞ্চয়

পেনশনপ্রতীকী ছবি: প্রথম আলো

ওয়াশিংটন ডিসির এক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ক্লোয়ে লয়েড এই কিছুদিন আগেও অবসরের জন্য অর্থ জমাতেন না। অবসরজীবনের যে আর্থিক পরিকল্পনা করতে হয়, সেটা তাঁর কর্মতালিকাতেই ছিল না।

ক্লোয়ের বয়স অবশ্য খুব একটা বেশি নয়। ২৫ বছর বয়সী এই তরুণী ইয়াহু ফাইন্যান্সকে বলেন, ‘জীবনটা সংগ্রামমুখর। শুধু আমি নই, আমার মতো জেন জি প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীর পেশাজীবন মহামারির কারণে শুরু হতে দেরি হয়েছে। এরপর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অবসরকালীন সঞ্চয়ের সক্ষমতা কমে যায় আমার। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই যুগে আগামীকাল কেমন যাবে, আমরা তা জানি না। এ পরিস্থিতিতে আমি কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয়ের কথা ভাবতে পারি।’ খবর ইয়াহু ফাইন্যান্সের

শেষমেশ একটি পেনশন তহবিলে যুক্ত হয়েছেন ক্লোয়ে। রথ আইআরএ নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পেনশন তহবিলে প্রতি সোমবার ২৫ ডলার করে জমা দেন তিনি; এই অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁর হিসাব থেকে কেটে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘অর্থ জমাতে ভালোই লাগে; এই তহবিলে আরও অর্থ জমানোর ইচ্ছা আমার; কিন্তু তা করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি কেবল প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর চেষ্টা করছি।’

ক্লোয়ে লয়েডের মতো আরও অনেক মার্কিন তরুণ-তরুণীর পক্ষে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থ জমানো সম্ভব হচ্ছে না। অর্থাৎ তাঁরা অবসরের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। অনেক মানুষ অবসরের জন্য অর্থ জমানো বন্ধ করে দিয়েছেন; অনেকে আবার অর্থ জমার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার খরচ কুলিয়ে উঠতে না পেরে পেনশন তহবিল থেকে ঋণ নিচ্ছেন অথবা পুরো অর্থ তুলে নিচ্ছেন। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেনশন তহবিল ভ্যানগার্ড ৪০১ (কে) হিসাব থেকে ইতিহাসের সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ অর্থ তুলে নিয়েছেন বা ঋণ নিয়েছেন।

গত বছরসহ এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্টক মার্কেট চাঙা থাকার কল্যাণে দেশটির বিভিন্ন পেনশন তহবিল ফুলেফেঁপে উঠেছে ঠিক, কিন্তু এ পরিস্থিতির নেতিবাচক দিক আছে একটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কাউন্সিল অন এজিংয়ের প্রধান ভোক্তা কর্মকর্তা জম হজেস বলেন, এখন অবসর সময়ের জন্য সঞ্চয়ের যে পরিস্থিতি, সেটা হলো চরম বিশৃঙ্খলা।

অনেক মানুষ অবসরের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ জমাতে পারলেও অনেক মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় খুব একটা বেশি অর্থ জমাতে পারছেন না।

সম্ভাবনা আছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাকরিদাতাদের স্বয়ংক্রিয় অবসরকালীন কর্মসূচির বাইরে যাঁরা থেকে যাচ্ছেন, তাঁদের জীবনে এখন এমন বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এই সংখ্যা ৫৬ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ৬০ লাখ।

দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা পৃথিবীতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। গ্যাসোলিন থেকে শুরু করে বাড়ি সংস্কার, বাড়িভাড়া—সবকিছুর খরচই বাড়তি। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাবে অনুযায়ী, মার্চ মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

ফলাফল: আলিয়ানজ লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন মানুষ পেনশন তহবিলে চাঁদা কমিয়ে দিয়েছেন। প্রতি তিনজনে দুজন পরিষেবা মাশুল পরিশোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন; অবসরকালীন সঞ্চয় নিয়ে অতটা নন।

আরেকটি উদ্বেগজনক খবর হলো, প্রতি পাঁচজনে দুজন মার্কিন নাগরিক বলেছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অবসরের জন্য সঞ্চিত অর্থে হাত দিতে হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলেন, প্রতিবছর অন্তত আয়ের ১৫ শতাংশ সঞ্চয় করা উচিত, ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক অবদানসহ। অধিকাংশ মানুষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে এটা ভালো। শুরুতে সঞ্চয়ের পরিমাণ কিছু কম থাকলেও সমস্যা নেই, পরবর্তীকালে তা বাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব।

কেউ কেউ পরামর্শ দেন, ৬৭ বছর বয়সের আগে প্রাক্‌–অবসরকালীন আয়ের ১০ গুণ সঞ্চয় করা উচিত। সে জন্য ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ১ বছরের আয়ের সমপরিমাণ, ৪০ বছরের মধ্যে ৩ বছরের, ৫০ বছরের মধ্যে ৬ বছরের ও ৬০ বছরের মধ্যে ৮ বছরের আয়ের সমপরিমাণ সঞ্চয়ের পরামর্শ দেন তাঁরা।

কিন্তু এ সবকিছু নির্ভর করবে মূল্যস্ফীতির ওপর। এটি যে নীরব ঘাতক, তা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের মানুষের অবসরকালীন সঞ্চয়ের এই হাল দেখেই বোঝা যায়।