বিজ্ঞাপনদাতাদের খেপিয়ে কী করতে চান ইলন মাস্ক

ইলন মাস্কফাইল ছবি: রয়টার্স

বিজ্ঞাপনশিল্পের প্রতি ইলন মাস্কের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই অবজ্ঞাপূর্ণ। সে জন্য তাঁর মালিকানাধীন খুদে ব্লগ লেখার ওয়েবসাইট এক্স (সাবেক টুইটার) থেকে বিজ্ঞাপনদাতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপনদাতাদের উদ্দেশে খেদ ঝাড়েন মাস্ক। সেখানে তিনি তীব্র ভাষায় বিজ্ঞাপনদাতাদের আক্রমণ করেন।

ইলন মাস্ক একজন ‘খ্যাপাটে ধনী’ হিসেবে পরিচিত। ফলে বিজ্ঞাপনশিল্পের প্রতি তাঁর এই খেদ স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু দ্য ইকোনমিস্ট–এর এক সংবাদে বলা হয়েছে, যে কোম্পানি গত বছর মোট রাজস্বের ৯০ শতাংশ বিজ্ঞাপন থেকে আয় করেছে, সেটির মালিকের জন্য এটা সাহসী উচ্চারণ। বিষয়টি হলো, অ্যাপল ও ডিজনির মতো কোম্পানি এক্স থেকে বিজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অথচ মাস্ক একসময় বলেছিলেন, এসব কোম্পানির এক্সে বিজ্ঞাপন দেওয়ার অর্থ হলো, ব্র্যান্ডগুলোর জন্য এক্স নিরাপদ।

বিজ্ঞাপনদাতারা মনে করছেন, এক্সে এখন ন্যক্কারজনক কনটেন্ট বা আধেয় যাচ্ছে। সাবেক টুইটারের মডারেটরসহ ৮০ শতাংশ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছেন মাস্ক, এরপর আধেয় বা কনটেন্টের মানের অবনতি ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের ওপর নজরদারির প্রতিষ্ঠান মিডিয়া ম্যাটার্স ফর আমেরিকা জানিয়েছে, এক্সে আইবিএমের মতো কোম্পানির বিজ্ঞাপন এমন আধেয়ের পাশে প্রদর্শিত হচ্ছে, যেখানে অ্যাডলফ হিটলারের প্রশংসা করা হয়েছে।

মূল ধারার গণমাধ্যমের পক্ষে যা কঠিন, সামাজিক েযাগােযাগ মাধ্যমের পক্ষে তা তুলনামূলক সহজ। ফলে তারা বিজ্ঞাপনদাতাদের মুখের ওপর না করে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারার টিভি নেটওয়ার্ক যেখানে বড়জোর ১০০ কোম্পানির কাছ থেকে সিংহভাগ রাজস্ব আয় করে থাকে, সেখানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম লাখ লাখ ছোট বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে বিজ্ঞাপন পেয়ে থাকে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের তথ্যানুসারে, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম বৃহত্তম ১০০ বিজ্ঞাপনদাতার কাছ থেকে ৪৫ শতাংশ রাজস্ব আয় করে।

২০২০ সালে ইউনিলিভার ও স্টারবাকসের মতো ৬০০টি প্রতিষ্ঠান ফেসবুককে বর্জন করলেও তাদের রাজস্ব আয়ে বিশেষ প্রভাব পড়েনি। তবে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন আকর্ষণ করার যে উন্নত পদ্ধতি আছে, তা কিন্তু এক্সের নেই। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে মাস্ক যখন টুইটারের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোম্পানিটি যে রাজস্ব আয় করত তার ৭০ ভাগ আসত ১০০টি কোম্পানির কাছ থেকে।

সেন্সর টাওয়ার বলছে, এরপর সেই বিজ্ঞাপনদাতাদের অর্ধেকই টুইটারকে ছেড়ে চলে গেছেন। ১ ডিসেম্বর ওয়ালমার্ট জানায়, এক্সে বিজ্ঞাপন দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না বলে তারা এই প্ল্যাটফর্ম ত্যাগ করেছে, যার ফলাফল ভয়াবহ।

এর আগে সেপ্টেম্বর মাসে ইলন মাস্ক নিজেই জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক্সের বিজ্ঞাপন আয় ৬০ শতাংশ কমেছে। ইলন মাস্ক যে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ শুরু করেছেন, তার সে রকম প্রভাব অন্যান্য অঞ্চলে হয়তো পড়েনি। কিন্তু সমস্যা হলো, এক্স বিজ্ঞাপনী আয়ের জন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোর ওপর একরকম নির্ভরশীল। ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার বিজ্ঞাপন আয়ের মূল উৎস যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে হলেও মাস্ক যখন টুইটার কেনেন, তখন তাঁর ৫৬ শতাংশ রাজস্ব আসত যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

আরেক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইনসাইডার ইন্টেলিজেন্স বলেছে, চলতি বছর শেষে এক্সের বৈশ্বিক বিজ্ঞাপন আয় অর্ধেকের বেশি কমে যাবে।

ইলন মাস্কের বিজ্ঞাপনবিরোধী অবস্থান ভক্তদের পছন্দ হলেও এক্স কিন্তু এখন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এক্সের ব্যবহারকারী অনেক, মেটার মালিকানাধীন থ্রেডসের অন্তত পাঁচ গুণ। কিন্তু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্সর টাওয়ারের সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর এক্সের অ্যাপ ডাউনলোড করার সংখ্যা কমে গেছে। তাদের হিসাবে প্রতি মাসে এক্স ১৫ শতাংশ ব্যবহারকারী হারাচ্ছে। ফলে সামাজিক মাধ্যমটির জনপ্রিয়তা ও গ্রাহক সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।

এক্সের অ্যাপ ডাউনলোড কমার পাশাপাশি ও মাসে ১৫ শতাংশ ব্যবহারকারী হ্রাসের আরেকটি কারণ হতে পারে, এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বট ও ভুয়া অ্যাকাউন্ট সরিয়ে ফেলা। বিজ্ঞাপনী রাজস্ব কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এক্স ভিন্ন উৎস থেকে অর্থ উপার্জনের পথ খুঁজছে।