রাশিয়ায় রাষ্ট্রীয় দেনাদারের তালিকা থেকে গুগল ও ফেসবুক উধাও

গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট, ইউটিউব, মেটা, টিকটক ও টেলিগ্রামের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে রাশিয়ার আদালত যেসব জরিমানা করেছিলেন, আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সেগুলো পরিশোধ করা হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় দেনাদারদের তালিকায় এসব কোম্পানি আর নিবন্ধিত নয়, সে জন্য এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স রাশিয়ার সেই তথ্যভান্ডারে ঢুকে দেখেছে, তালিকায় এক্স (সাবেক টুইটার) ও টুইচের নাম আছে; যাদের যথাক্রমে ৫ লাখ ৬০ হাজার ৭৩০ ও ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৯ ডলার জরিমানা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে গুগল, মেটা, টিকটক ও টেলিগ্রামের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগ করলেও তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।

বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির ওপর সময়-সময় খড়গহস্ত হয়েছে রাশিয়া। দেশটির ২০১৫ সালের তথ্য আইন অনুযায়ী, সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিকে রুশ নাগরিকদের সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য রাশিয়ার কোনো সার্ভারে সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু রাশিয়া বলেছে, এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ কনটেন্ট প্রদর্শন করা হয়; সেই সঙ্গে এসব কোম্পানি স্থানীয়ভাবে তথ্য সংরক্ষণ করে না। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে এই দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়।

ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ায় টুইটার, মেটা ও ইনস্টাগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে গুগলের মালিকানাধীন ইউটিউব রাশিয়া সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হয়।

২০২৩ সালে রাশিয়ার আদালত গুগলকে পাঁচ কোটি ডলারের বেশি জরিমানা করে। রাশিয়ায় কোম্পানিটি যে বার্ষিক রাজস্ব আয় করে, সেই অনুপাতে এই জরিমানা করা হয়। মেটাকে ২০২২ সালে ‘চরমপন্থী’ আখ্যা দিয়েছিল রাশিয়া। তাদেরও রাজস্ব আয়ের অনুপাতে জরিমানা করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে এখন সারা পৃথিবীতেই তোলপাড় চলছে। যে কেউ কোনো বিষয়ে যা খুশি বলে দিতে পারে এই মাধ্যমে আইনের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যার ঘটনা ফেসবুকে লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়েছিল। এরপর ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে বিশ্বজুড়ে ধিক্কার জানানো হয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এখন চেষ্টা চলছে কীভাবে বড় বড় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিকে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তাদের আইনের আওতায় কাজ করতে বাধ্য করা যায়। অনেকে অবশ্য মনে করছেন, এটা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা।

একসময় রাশিয়া ও চীনের মতো কর্তৃত্ববাদী দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকলেও এখন পশ্চিমের উদার গণতান্ত্রিক দেশগুলোও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে।