দামি বাড়ির বাজার শুধু ইটপাথরের হিসাব নয়, একই সঙ্গে তা ধন, ক্ষমতা ও মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ। গত এক দশকে বিশ্বের বিলাসবহুল শহরগুলোয় একের পর এক রেকর্ড গড়ে বিক্রি হয়েছে কোটি কোটি ডলারের প্রাসাদসম বাড়ি।
এসব বাড়ি কারা কিনেছেন। উত্তরটা বিস্তৃত—চীনা ধনকুবের, সৌদি যুবরাজ, রুশ ধনী, মার্কিন বিনিয়োগকারী, এমনকি পপ তারকা ও ক্রীড়াপ্রেমী উদ্যোক্তাও আছেন সেই তালিকায়। কেউ কেউ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে এই বাড়ি কিনেছেন, আবার কেউ করছেন ভৌগোলিক বৈচিত্র্য আনতে। খবর ম্যানশন গ্লোবালের
সবাই যে এক উদ্দেশ্যে এসব বাড়ি কিনছেন, তা নয়। কারও উদ্দেশ্য নিরাপদ বিনিয়োগ, কারও উদ্দেশ্য দ্বিতীয় বাসভবন কেনা, আবার কেউ খোঁজেন কর ফাঁকির সুযোগ বা গোপনীয়তার নিশ্চয়তা। বিষয়টি শুধু প্রাসাদের প্রতি মোহ নয়, বিশ্বজুড়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনার আঙ্গিক যেভাবে বদলে গেছে, এটি তারও প্রতিফলন। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে হংকংয়ের ডিপ ওয়াটার বে। ২০১৭ সালে বিক্রি হওয়া বাড়িটির মূল্য ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার। বর্তমান বাজারদরে এর দাম প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
নিচের তালিকায় দেখুন গত দশকে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামি ১০টি বাড়ি।
ক্রেতা: প্যান সুটং, গোল্ডেন গ্রুপ
১৩ হাজার ৮৫৪ বর্গফুটের এই বাড়ি কিনেছেন চীনের একসময়ের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি প্যান সুটং। হংকংয়ের অভিজাত এলাকা ডিপ ওয়াটার বেতে অবস্থিত বাড়িটির দাম পড়েছিল ২১০ কোটি হংকং ডলার বা ৩২২ মিলিয়ন বা ৩২ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলারের সমান। এরপর অবশ্য তাঁর ব্যবসার গতিমুখ বদলে যায়। বাড়িটি বন্ধক রেখে তিনি তিনবার ঋণ নেন এবং বর্তমানে তিনি দেউলিয়াত্বের মামলা লড়ছেন।
ক্রেতা: মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ, সৌদি যুবরাজ
শাতো লুই চতুর্দশ কিনেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ৫৭ একরের প্রাসাদটি ১৭ শতকের নকশায় তৈরি হলেও নির্মিত হয়েছিল ২০০০-এর দশকে। ফলে দেখলে মনে হবে, বাড়িটি ফ্রান্সের ভার্সাই রাজপ্রাসাদের কাছাকাছি সময়ে নির্মিত। বাড়িটিতে রয়েছে খাল, আইফোনে নিয়ন্ত্রিত ঝরনা, পার্কসহ নানা বিলাসী সুবিধা।
ক্রেতা: হুই কা ইয়ান, এভারগ্র্যান্ড গ্রুপ
হাইড পার্কের পাশে ২০ কক্ষবিশিষ্ট এই মেগা ম্যানশন কিনেছেন চীনের আবাসন খাতের মহিরুহ প্রতিষ্ঠান এভারগ্র্যান্ড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হুই কা ইয়ান। কিন্তু কেনার কিছুদিনের মধ্যেই চীনের রিয়েল এস্টেট সংকটের পড়ে যায় এই কোম্পানি। ২০২৩ সালে চীনা কর্তৃপক্ষ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ক্রেতা: হংতিয়ান চেন, চুং কেই গ্রুপ
হংকংয়ের ধনীদের পছন্দের জায়গা ‘দ্য পিক’-এ বাড়িটি কিনেছিলেন হংতিয়ান চেন। পরে তাঁর কোম্পানি আর্থিক সংকটে পড়ে এবং বাড়িটি বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়।
ক্রেতা: কেন গ্রিফিন, সিটাডেল গ্রুপ
৭৯ তলা টাওয়ারের ৪টি তলা কিনে যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড গড়েন বিনিয়োগকারী কেন গ্রিফিন। একা নিউইয়র্কেই নয়, লন্ডন, মায়ামি, পাম বিচসহ নানা জায়গায় মিলিয়ে তিনি সম্পত্তি কিনতে ইতিমধ্যে এক বিলিয়নের বেশি খরচ করেছেন।
ক্রেতা: অজ্ঞাতনামা
২০২৫ সালের সর্বশেষ কেনাবেচায় মালিকানা বদল হয় ১৫ একরের জলাশয়ে ঘেরা বাড়িটির। এটি এখন পর্যন্ত ফ্লোরিডার সবচেয়ে দামি আবাসন লেনদেন।
ক্রেতা: রিনাত আখমেতভ, ইউক্রেন
ফ্রান্সের দক্ষিণে ৩৫ একর জমিতে অবস্থিত ঐতিহাসিক এই বাড়ি কিনেছেন ইউক্রেনের ধনী রিনাত আখমেতভ। ১৮৩০ সালে নির্মিত এই বাড়ির একসময়ের মালিক ছিলেন বেলজিয়ামের রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড।
বিক্রেতা: জিম জানার্ড, ওকলি
সানগ্লাস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওকলির প্রতিষ্ঠাতা জেমস জানার্ড ২০২৪ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মালিবুতে অবস্থিত ১০ একরের এই বাড়ি রেকর্ড ২১ কোটি ডলারে বিক্রি করেন। তারকাবহুল এই এলাকায় এটিই ছিল সবচেয়ে দামি বাড়ি। জানার্ড ২০১৩ সালে মালিবুর এনসিনো ব্লাফসে তিনটি প্লট মিলিয়ে ৮ বেডরুমের এই মেগা ম্যানশনটি কিনেছিলেন ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারে।
ক্রেতা: বিয়ন্সে ও জে-জি
প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ের পাশে অবস্থিত ৩০ হাজার বর্গফুটের এই উপকূলীয় প্রাসাদ কিনেছেন গায়ক জুটি বিয়ন্সে ও জে-জি। বাড়িটি নকশা করেছিলেন জাপানি স্থপতি তাদাও আন্দো।
ক্রেতা: জোসেফ চাই, আলিবাবা গ্রুপ
চীনের আলিবাবা গ্রুপের সহপ্রতিষ্ঠাতা জোসেফ চাই নিউইয়র্ক শহরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া বাড়ির মালিক হন ২০২২ সালে। পেন্টহাউসটি ২২০ সেন্ট্রাল পার্ক সাউথ ভবনের ৭৩ তলায়। ব্লু পুল ক্যাপিটালের মাধ্যমে এটি কেনেন জোসেফ। ড্যান ওচ নামের এক হেজ ফান্ড ব্যবস্থাপক আগে এই পেন্টহাউসের মালিক ছিলেন।