দামে সাশ্রয়, ডলারে চাপ কম
রাশিয়ার তেল কেনায় ভারতের রেকর্ড
জানুয়ারিতে ভারত বিশ্ববাজার থেকে যত তেল কিনেছে, তার ২৮ শতাংশই কিনেছে রাশিয়া থেকে।
রাশিয়া থেকে তেল কেনা আরও বাড়িয়েছে ভারত। কয়েক মাস ধরেই রাশিয়া থেকে তেল কেনায় ভারত রেকর্ড গড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত জানুয়ারিতেও তা নতুন রেকর্ড গড়ল ভারত। ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের তথ্যানুসারে, জানুয়ারিতে রাশিয়ার কাছ থেকে দিনে ১৪ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে ভারত।
ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে ভারত বিশ্ববাজার থেকে যত তেল কিনেছে, তার ২৮ শতাংশই কিনেছে রাশিয়া থেকে। অথচ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর আগে রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল কেনার পরিমাণ ছিল শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। এক বছরে তা ২৮ শতাংশে উঠেছে। রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কম দামে ভারতকে তেল দিচ্ছে। সস্তায় তেল কিনে ভারতও বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় করছে।
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বৃদ্ধিতে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেকের কাছ থেকে ভারতের তেল কেনা কমেছে। ২০০৮ সালে ভারত ৮৭ শতাংশ তেল কিনেছে ওপেকভুক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে। ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশে। ভারতের তেল আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে রয়টার্স এই পরিসংখ্যান দিয়েছে। তা সত্ত্বেও গত বছর রাশিয়ার পর ভারতে শীর্ষ তেল সরবরাহকারী ছিল ইরাক ও সৌদি আরব।
মাসখানেক আগে সমুদ্রপথে পরিবহন করা রাশিয়ার তেলে মূল্যসীমা আরোপের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ঠিক সেই সময়েই রাশিয়ার তেল আমদানি বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি। রয়টার্স জানায়, বর্তমানে ইইউ নির্ধারিত মূল্যসীমার চেয়েও অনেক কম দামে বা প্রতি ব্যারেল ৬০ ডলারের কমে রাশিয়ার তেল কেনা যাচ্ছে। ভারত সেই সুযোগ লুফে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অনেক দেশ সেই সুযোগ নিতে পারছে না। এতে দেশের আমদানি ব্যয় বাড়ছে, বোঝা বাড়ছে ক্রেতাদের।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে পশ্চিমারা রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এতে বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়তে শুরু করে তেলের দাম। দীর্ঘ সাত বছর পর তা ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। একপর্যায়ে এ দাম উঠে ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ মার্কিন ডলারে। তাতে তেল আমদানির খরচ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় ডলারের বিনিময় হারও। তৈরি হয় ডলার-সংকট, কমে যায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কিন্তু পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা না শুনে ভারত রাশিয়ার তেল কেনা বাড়িয়ে দেয়। এতে দেশটি বড় সংকট এড়াতে পেরেছে বলে মনে করেন জ্বালানি খাতের বিশ্লেষকেরা।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জিজ্ঞাসা করা হয়, ভারত কেন পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাশিয়ার তেল কিনছে? জবাবে তিনি যেসব উত্তর দিয়েছেন, তার সবই নেটিজেনদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। জয়শঙ্কর বলেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপ রাশিয়ার তেল কিনেছে ভারতের চেয়ে ছয় গুণ বেশি, তাহলে ভারত কেন কিনবে না?
তবে জয়শঙ্করের সবচেয়ে সাহসী উত্তর হচ্ছে, ইউরোপ কেন মনে করে, তার সমস্যা অন্যদেরও সমস্যা হবে। অর্থাৎ এই যুদ্ধ রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকার সমস্যাপ্রসূত, এর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নেই।
ভারত জি ৭-এর নীতিতেই চলছে
এদিকে দুই দিন আগে ইকোনমিক টাইমসের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে তেল কিনে কার্যত জি ৭–এর নীতির প্রতি সমর্থন জোগাচ্ছে। বিষয়টি হলো ভারত জি ৭-এর বেঁধে দেওয়া দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের চেয়ে ১৫ ডলার কম মূল্যে রাশিয়ার তেল কিনছে। দর–কষাকষি করছে প্রতিনিয়ত। এতে রাশিয়ার পক্ষে তেল বেচে যুদ্ধের ব্যয় তোলা কঠিন হয়ে উঠবে। অর্থাৎ ভারত একদিকে স্বল্প মূল্যে তেল কিনে বিদেশি মুদ্রা বাঁচাচ্ছে, অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে দর-কষাকষি করে জি ৭-এর নীতিতেও চলছে।