মার্কিন মাইক্রন চিপে চীনের নিষেধাজ্ঞা, ‘সহ্য করবে না’ যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রন চিপের ওপর চীন যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সে ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ওয়াশিংটন বলেছে যে তারা এই নিষেধাজ্ঞা ‘সহ্য করবে না’। এমনকি মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে এই ‘অর্থনৈতিক দমননীতি’ মোকাবিলা করবে বলেও জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমোন্ডো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্কের (আইপিইএফ) বাণিজ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রাইমোন্ডো। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের এ ধরনের তৎপরতার কঠোর বিরোধিতা করবে।

জিনা রাইমোন্ডো বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানিকে লক্ষ্য করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চোখে এটি একদম পরিষ্কার দমননীতি এবং তারা এটা সহ্য করবে না। শুধু তা–ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এই নিষেধাজ্ঞা সফল হবে না।

নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে চীনের সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, মার্কিন চিপ কোম্পানি মাইক্রন নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা পর্যালোচনা পরীক্ষায় পাস করতে পারেনি, সে কারণে চীনের মোবাইল ফোন অপারেটরদের এই চিপ কিনতে দেওয়া হবে না। এতে মাইক্রনের রাজস্ব আয় কমে যাবে।

অর্থনৈতিক দমননীতি

এই নিষেধাজ্ঞার ঠিক আগের দিনই জি–৭ ভুক্ত দেশের নেতারা চীনের অর্থনৈতিক দমননীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জিনা রাইমোন্ডো বলেন, ‘আমরা জি–৭-এও এ কথা বলেছি। শুধু সেখানে নয়, অনেক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবেই এ কথা বলছি। চীনের বাজারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অংশীদারদের সঙ্গে আমরা ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের সময় দুই দেশ পরস্পরের অনেক পণ্যে শুল্ক ও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। প্রযুক্তি নিয়েও তাদের মধ্যে বিবাদ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাওয়ের সঙ্গে বৈঠকেও জিনা রাইমোন্ডো মাইক্রনের বিষয়টি তুলেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্র সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে নিজ দেশে উৎপাদন বাড়াতে চায়। সে লক্ষ্যে তারা চিপস অ্যাক্টও করেছে, যার আওতায় তারা নিজ দেশে ৫২ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।

রাইমোন্ডো বলেন, আইপিইএফে যে নীতি ঘোষণা করা হয়েছে, সেই নীতি অনুযায়ী চিপ উৎপাদনে দেশে বিনিয়োগ করা সামঞ্জস্যপূর্ণ। আইপিইএফের সদস্যদেশগুলোকেও চিপ উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে সরবরাহব্যবস্থা জোরদার করে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব কমাতে নতুন এক ঐকমত্যে পৌঁছেছে ১৪টি দেশ। ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্কের (আইপিইএফ) আওতায় ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ ১৪টি দেশ শনিবার ঘোষণা দিয়েছে, এ-বিষয়ক আলোচনায় প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

এ ছাড়া সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ ও পণ্য জাহাজিকরণের ক্ষেত্রেও দেশগুলো পরস্পরের কাছাকাছি আসবে। বলা হয়েছে, আইপিইএফ অংশীদারদের মধ্যে জরুরি সময়ের জন্য নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। সরবরাহব্যবস্থা সচল রাখা ও দক্ষ মানবসম্পদ নিশ্চিত করতেও কাজ করবে এই নেটওয়ার্ক, যা করা হবে বিনিয়োগ সংগ্রহে পরস্পরকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি।

চিপসের যুদ্ধ

এত দিন পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহ হয়েছে তেল নিয়ে। কিন্তু এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে আরেক অমূল্য সম্পদের জন্য। সেটি হলো, সেমিকন্ডাক্টর বা চিপস, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত হয়। গাড়ি থেকে শুরু করে মুঠোফোন, কম্পিউটার—সবখানেই এই চিপসের ব্যবহার।

বিবিসির এক সংবাদে বলা হয়েছে, চিপস আকারে ছোট, সিলিকনের ছোট এক টুকরা, কিন্তু চিপসের বাজার মোটেও ক্ষুদ্র নয়। সারা পৃথিবীতে ৫০ হাজার কোটি ডলারের বাজার এই সেমিকন্ডাক্টর—আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তা ফুলেফেঁপে দ্বিগুণ হবে।

এই চিপস তৈরির কাঁচামাল আসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে, অনেক কোম্পানি এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই সরবরাহব্যবস্থা এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে এর ফলে যার হাতে এই সরবরাহব্যবস্থা বা ‘সাপ্লাই চেইনের’ নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তাদের হাতেই থাকবে পরাশক্তি হয়ে ওঠার চাবিকাঠি।

এই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ বেশির ভাগই আছে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। তবে চীন এখন নিম্ন প্রযুক্তি ছেড়ে উচ্চ প্রযুক্তিতে যেতে চাইছে। চিপ নির্মাণে বিনিয়োগও করছে তারা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, চীন যেন কিছুতেই তা না করতে পারে।