নগদ অর্থের সংকট চীনে, সুদের হার উঠেছে ৫০ শতাংশে

চীনের জাতীয় পতাকা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মাসের শেষ প্রান্তে চীনের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল হারে সুদ দিয়ে নগদ অর্থ সংগ্রহ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, মাসের শেষ প্রান্তে বাজারে নগদ অর্থের সরবরাহে টান পড়ায় অর্থবাজারে সংকট তৈরি হওয়ায় এক দিন মেয়াদি তহবিলের সুদহার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়।

গতকাল ছিল অক্টোবর মাসের শেষ দিন। চীন সরকারের বেশ কিছু বন্ড শিগগিরই বাজারে আসছে। সে কারণে বাজারে নগদ অর্থের সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে সংকটগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণখেলাপি হয়ে পড়বে, সেই আশঙ্কাও এই পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে ভূমিকা পালন করেছে।

এই পরিস্থিতিতে গতকাল স্বল্পমেয়াদি ঋণের রেপো হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উঠে যায়, যদিও গড়পড়তা রেপো হার ৩ দশমিক ৬ শতাংশের মতো ছিল।

দুই দিন মেয়াদি তহবিলের রেপো হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ওঠে। সেই সঙ্গে সাত দিন মেয়াদি তহবিলের রেপো হার ছিল ১২ শতাংশ।

এই পরিস্থিতিতে চীনের ব্রোকারেজ হাউসের এক ব্যবসায়ী বলেন, তারল্যের এই সংকট দেখে তিনি রীতিমতো চমকে উঠেছেন এবং এর ফলেই সুদহার অনেকটা বেড়ে গেছে।

এর আগে ২০১৩ সালের জুন মাসে চীনে এমন নগদ অর্থের সংকট হয়েছিল। সেবার এক দিনের ঋণের রেপো হার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।

গুওলিয়ান সিকিউরিটিজের অর্থনীতিবিদ রকি ফ্যান বলেন, ২০১৩ সালের সেই সংকট তৈরি হয়েছিল ছায়া ব্যাংকিংয়ের রাশ টেনে ধরার কারণে। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিনিয়োগকারীরা স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেওয়ার জন্য অর্থ ধার করেছেন। এখন এসব ঋণের মূল্য পড়ে গেলে বিনিয়োগকারীরা অর্থ হারাতে পারেন। সেই পরিস্থিতিতে বাজারে নগদ অর্থের সংকট হতে পারে। বিনিয়োগকারীরা আর্থিক খাতের বাধ্যবাধকতা মেটানোর মতো জায়গায় না–ও থাকতে পারেন।

গতকাল সন্ধ্যায়ও ছোট ছোট অনেক বিনিয়োগকারী ধার করার মতো অর্থের সন্ধান করছিলেন। অনেকে আবার বাজারে খেলাপি হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছিলেন রয়টার্সের কাছে, যদিও তাঁরা সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

গ্রাহকদের উদ্দেশে এক নোটে সাইটং সিকিউরিটিজ বলে, গতকাল বাজারে তারল্যের বড় সংকট ছিল।

ব্রোকারেজ হাউসগুলো বলছে, বাজারে সরকারি বন্ডের রেকর্ড সরবরাহের কারণে নগদ অর্থের সংকট তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকের অর্থ সংগ্রহের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়াও আরেকটি কারণ।

গত সপ্তাহে চীন অর্থনীতি চাঙা করতে এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারের সার্বভৌম বন্ড বাজারে ছাড়ে। অন্যদিকে স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আগের ঋণ শোধ করতে পুনঃ অর্থায়ন বন্ড ছাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে চীন সরকার মুদ্রানীতির রাশ ছাড়তে বাধ্য হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

সিটিক সিকিউরিটিজর প্রধান অর্থনীতিবিদ মিং মিংয়ের আশা, নভেম্বর মাসে রেপো হার কমে আসবে। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতির রাশ ছেড়ে দিয়ে রাখবে এবং ব্যাংকের প্রয়োজনীয় নগদ অর্থ মজুতের বিধানেও ছাড় দেবে।