মূল্যস্ফীতিতে জেরবার ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল। প্রতি মাসেই মূল্যস্ফীতির নতুন রেকর্ড হচ্ছে। একবার যুক্তরাস্ট্রের মূল্যসূচক রেকর্ড গড়ছে তো আরেকবার যুক্তরাজ্যের সূচক রেকর্ড উচ্চতায় উঠছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও (ইসিবি) অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পথে হাঁটতে শুরু করল। অর্থাৎ তারাও নীতি সুদহার বৃদ্ধি করল—শূন্য দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট।
বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সময়-সময় তারা পরিস্থিতি বুঝে নীতি সুদহার বাড়াবে বা কমাবে, সেটাই স্বাভাবিক। এবারের মূল্যস্ফীতির দাপটে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বৃদ্ধি সময়ের অপেক্ষা ছিল বলেই ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু একটি কারণে এই সুদ বৃদ্ধির ঘটনা বিশিষ্ট, সেটি হলো, ১১ বছর এই সুদহার বৃদ্ধি করা হলো। সূত্র নিউইয়র্ক টাইমস।
ইউরো অঞ্চলের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছেই। গত জুন মাসে আগের বছরের জুন মাসের তুলনায় তাদের মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যার পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি।
২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সংকটের পর ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অত্যন্ত শিথিল মুদ্রানীতি পরিচালনা করেছে। টানা আট বছর তারা নীতি সুদহার রেখেছে ঋণাত্মক, যা ছিল এত দিন মাইনাস শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এখন তা শূন্য করা হয়েছে।
কিন্তু এই নীতি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে ইসিবি নতুন বিপদে পড়ল। অন্য যেসব দেশ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে, তারাও একই সমস্যায় পড়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নাকি মুদ্রাপ্রবাহের রাশ টানা—এই দুয়ের মধ্যে তাদের অত্যন্ত কৌশলে ভারসাম্য করতে হচ্ছে।
এর আগে ২০১১ সালে ইসিবি সর্বশেষ নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছিল, যদিও চার মাস পরেই তা প্রত্যাহার করা হয়। এই অঞ্চলের বন্ড বাজারের সংকট ঘনীভূত হওয়ার কারণে নীতি প্রণেতারা সুদহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন। তবে নীতি সুদ ঋণাত্মক রেখেও প্রবৃদ্ধির পালে তেমন একটা হাওয়া লাগাতে পারেনি ইসিবি। গত ১০ বছরে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার খুব একটা বাড়েনি। ফলে এখন নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে তারা মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
এর আগে মূল্যস্ফীতির সূচক বাড়তে থাকলে ফেডারেল রিজার্ভ, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশ ব্যাংকও নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এবারের মূল্যস্ফীতি ঠিক চাহিদাজনিত নয়, সরবরাহ ব্যবস্থার সংকটজনিত। সে জন্য নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে তেমন একটা লাভ হবে না বলেই তাঁরা মনে করেন।