১০ বিলিয়ন ডলারের ‘ভুল প্রকল্পে’ ঘুরে দাঁড়াবে কানাডার তেলশিল্প

ছবি: রয়টার্স

গত এক দশকে কানাডার তেল কোম্পানিগুলো যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে, সেটাকে একবাক্যে এভাবে বলা যায়: যার এমন বন্ধু আছে, তার শত্রুর কী দরকার। বিষয়টা হলো, তেল রপ্তানির জন্য কানাডার দক্ষিণাঞ্চলে পাইপলাইন বসানো হয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আদালত নতুন পাইপলাইন স্থাপন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কানাডার তেলশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কানাডার তেল কোম্পানিগুলো শত শত কোটি ডলারের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে; বিঘ্নিত হচ্ছে দেশটির তেলশিল্পের বিকাশ।

নতুন এক তেল প্রকল্প দেশটির তেলশিল্পে পুনর্জাগরণ ঘটাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও অনেকে বলছেন, এই প্রকল্প হাতে নেওয়া ভুল হয়েছে। কারণ, বিনিয়োগের তুলনায় সুবিধা মিলবে কম। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যমান যেসব পাইপলাইন আছে, সেগুলো দিয়ে পুরো সক্ষমতা অনুযায়ী তেল পরিবহন করা হচ্ছে। ফলে এখন কানাডা থেকে অতিরিক্ত এক ব্যারেল তেল যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে চাইলেও তা পাঠাতে হবে রেলপথে, যার ব্যয় অনেক বেশি। ২০১৮ সালে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তখন কানাডার অপরিশোধিত তেল অনেক কম দামে বিক্রি হয়েছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের তেলের তুলনায় কানাডার তেল কোম্পানিগুলো ব্যারেলে ৫০ ডলার পর্যন্ত কম পেয়েছে।

এভাবেই কয়েক বছর অতিবাহিত হয়েছে। তবে কানাডার তেলশিল্পের হাতে এখন সমাধান আছে, যদিও তা অনেক ব্যয়বহুল। সেটি হলো কানাডা সরকার ২৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় করে অ্যালবার্টা অঞ্চলের তেলক্ষেত্রগুলোর সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের ভ্যাঙ্কুভার বন্দর সংযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। নির্মাণকাজও প্রায় শেষ। সবকিছু যদি পরিকল্পনামতো চলে, তাহলে আগামী জুন মাসের আগে এই পাইপলাইনে তেল সরবরাহ শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে কানাডার তেল কোম্পানিগুলো যে ছাড় দিয়ে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হতো, তাদের সেই ক্ষতির পরিমাণ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই পাইপলাইনের অভিনবত্ব হলো, এর মধ্য দিয়ে কানাডা এই প্রথম তার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশী অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রকে এড়িয়ে তেল রপ্তানি করতে পারবে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় সেই বন্দরে কানাডার তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে যাওয়ার অর্থ হলো, সেখান থেকে ট্যাংকারের মাধ্যমে এই তেল এশিয়া ও চীনের বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০১৮ সালে এই প্রকল্প জাতীয়করণের পর বলেছিলেন, এটা অনেক বড় অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করবে। পরিকল্পনা ছিল এ রকম, রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পাইপলাইন নির্মাণ করে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে তেল বিক্রি করা হবে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সংবাদে বলা হচ্ছে, এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে করদাতাদের অর্থে এই পাইপলাইন নির্মাণ করা এক ‘বড় ধরনের ভুল প্রকল্প’।

এই প্রকল্পের নাম দ্য ট্রান্স মাউনটেইন এক্সপানশন। সমস্যা হলো, এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে অনেক বেশি। সে কারণে এখান থেকে যা আয় হবে, তা সরকারের বিনিয়োগের তুলনায় অনেক কম হবে। বিভিন্ন হিসাব পর্যালোচনা করে ব্লুমবার্গের সংবাদে বলা হয়েছে, এই পাইপলাইনের ব্যয় দাঁড়াবে ১০ বিলিয়ন বা এক হাজার কোটি ডলার। কানাডার জনগণের মাথাপিছু ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে এই প্রকল্পে। ট্রুডো সরকার এমনিতে পরিবেশবান্ধব হিসেবে পরিচিত। সে জন্য তাঁর আমলে এ ধরনের প্রকল্প নেওয়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বলা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে দেশটির পেট্রোলিয়াম খাতকে বড় ধরনের সহায়তা করা হলো।

বিপুল ব্যয় সত্ত্বেও ট্রান্স মাউনটেইন এক্সপানশন প্রকল্পের কিছু সুবিধাও আছে। প্রথমত, এর মধ্য দিয়ে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দামের ব্যবধান কমে আসবে। এতে কানাডার পেট্রোলিয়াম খাতে রাজস্ব আয় বাড়বে; প্রাদেশিক সরকারেরও রাজস্ব আয় বাড়বে। এ ছাড়া এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্বে তেল উৎপাদনে কানাডার অবস্থান চতুর্থ। আগামী কয়েক বছর দেশটির তেল উৎপাদন বাড়বে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই পাইপলাইনের বদৌলতে কানাডার তেল পরিবহনের সক্ষমতা বাড়বে দৈনিক ছয় লাখ ব্যারেল। এর বেশি উৎপাদন হলে সেই রেলপথেই তা পরিবহন করতে হবে। ফলে শেষমেশ এই প্রকল্প খুব একটা লাভবান হবে না বলেই ধারণা হচ্ছে।