ফাইল ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চীনা ঋণের ফাঁদ থেকে উদ্ধারের লক্ষ্যে ফ্রান্স, ভারত ও জাপান একজোট হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা একটি কমিটি গঠন করেছে। এই উদ্যোগে শরিক হওয়ার জন্য অন্যদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশ তিনটি। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার সরকারগুলো চীন থেকে প্রচুর অর্থ ধার নিয়ে তা তেমন বিচার–বিবেচনা না করেই খরচ করেছিল। ফলে দেশটি ক্রমাগত চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ে যায়।

ফ্রান্স, ভারত ও জাপান সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচি ঘোষণার সময় ফ্রান্স ঋণদাতাদের শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন–সংক্রান্ত আলোচনায় ‘স্বচ্ছতা’ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ, বিদেশি ঋণ নিয়ে শ্রীলঙ্কা এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রয়েছে। এ জন্য দেশটিতে জ্বালানি, জরুরি খাদ্য ও ওষুধ আমদানি ব্যাহত হয়েছিল এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।

ট্রেজারি ফ্রান্সের মহাপরিচালক (ডিজিটিএফ) এমানুয়েল মৌলিন বলেন, ‘এই তিন ঋণদাতার উদ্যোগ অন্যান্য ঋণদাতার জন্যও উন্মুক্ত, যারা যোগদানের জন্য আমন্ত্রিত। যেকোনো ক্ষেত্রেই আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় বজায় রাখব, যাতে আমরা দেশটির উপকার নিশ্চিত করতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন ঋণদাতাদের উচিত, ঋণ প্রদানের গতি বজায় রাখা ও আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করা। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শের মাপকাঠিতে ঋণবিষয়ক আলোচনায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা এবং একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে ঋণ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার।’

ভারত, জাপান ও ফ্রান্স শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠনে কর্মসূচি পরিচালনায় একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে। ভারত ইতিপূর্বে শ্রীলঙ্কাকে আর্থিক পুনরুদ্ধারের জন্য ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২৯০ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা দিতে আইএমএফে প্রভাব খাটিয়েছিল। ভারত ও তার মিত্ররা চীনকে পাশ কাটিয়ে তাদের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে চায়। কারণ, শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠন নিয়ে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকে কোনো আলোচনা হোক, তা চীন চায় না।

শ্রীলঙ্কাকে সাত দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত মাসে দেশটির জন্য ২৬০ কোটি ইউরো অনুমোদন করেছে। অন্যান্য ঋণদাতাও সহায়তা করতে ঋণে জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্রটির দরজায় কড়া নাড়ছে।

ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠন আলোচনায় সব ঋণদাতার পক্ষে স্বচ্ছতা ও সমতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।’

শ্রীলঙ্কা সরকারও ঋণ পরিস্থিতি সহজ করতে এই বছরের শুরু থেকে আলোচনা চালিয়ে আসছে। তারা এ ব্যাপারে আগামী মে মাসের মধ্যে একটি চুক্তি সইয়ের আশা করছে। কারণ, দেশটির কাছে দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের ৬৪০ কোটি ইউরো পাওনা রয়েছে। চীন হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম একক ঋণদাতা। দেশটির মোট বৈদেশিক ঋণের ১০ শতাংশই পাবে চীন।

সরকারি তথ্য অনুসারে, শ্রীলঙ্কার ২২ জাতির প্যারিস ক্লাবের কাছে ১৮০ কোটি ইউরো ও ভারতের কাছে প্রায় ১০০ কোটি ইউরো দেনা। এ ছাড়া বিদেশি বেসরকারি ঋণদাতাদের কাছেও ১ হাজার ৯০ কোটি ইউরো ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ঋণ বাবদ ১৮০ কোটি ইউরো দেনা।

জাপানের অর্থমন্ত্রী শুনিচি সুজুকি বলেছেন, ফ্রান্স ও দুটি এশীয় দেশ মিলে যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অন্য ঋণদাতাদেরও শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠন আলোচনায় উৎসাহিত করবে।

এ ছাড়া যেসব কোম্পানির কাছ থেকে শ্রীলঙ্কা ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণদাতারও একটি কমিটি দেশটির ঋণ পুনর্গঠনে কিছুদিন আগে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। শ্রীলঙ্কা এসব বেসরকারি আন্তর্জাতিক ঋণদাতার কাছে বন্ড বিক্রি করে মোট ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার নিয়েছিল। মোট ৩০টি বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অ্যামানডি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট, ব্ল্যাকরক, এইচবিকে ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, টি রো প্রাইস অ্যাসোসিয়েটস। ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় গত বছর শ্রীলঙ্কা খেলাপি হয়ে পড়ে। সূত্র: আরএফআই, রয়টার্স