মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভিয়েতনামের সঙ্গে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি ও খনিজ সম্পদ ব্যবহারবিষয়ক চুক্তি করেছেন। সেই সঙ্গে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ দেশের সর্বোচ্চ কূটনৈতিক মর্যাদায় উন্নীত করেছে। এত দিন যে মর্যাদা ছিল চীন ও রাশিয়ার।
রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এই কূটনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধির দাবি করে আসছিল। কারণ তারা মনে করছে, বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থা চীনের হাত থেকে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের ভূমিকা হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ।
ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অর্ধশতক পর পঞ্চম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন হ্যানয় সফরে গেছেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে ভিয়েতনামের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের ছাত্ররা মার্কিন পতাকা নেড়ে ও বেয়নেটযুক্ত রাইফেল কাঁধে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানায়।
এই অংশীদারি সম্পর্কে জো বাইডেন বলেছেন, গত ৫০ বছরে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে অনেক চড়াই-উতরাই ছিল। যুদ্ধের পর সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ ও সেখান থেকে এই নতুন উচ্চতায় ওঠা।
ভিয়েতনাম বিশ্বে স্বল্প খরচের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। সে কারণে তারা বেইজিং ও ওয়াশিংটন—উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। তবে দুই দেশের সম্পর্ক ঠিক বন্ধুত্বসুলভ নয়, ভিয়েতনামকে এর মধ্য দিয়েই চলতে হচ্ছে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের পর আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ভিয়েতনাম সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভিয়েতনামের কূটনীতিকেরা বলেছেন, ভিয়েতনাম সব পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
বাইডেন বলেছেন, সদ্য সমাপ্ত জি–২০ সম্মেলনে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের পরের নেতা প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওই আলোচনায় তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বাইডেন এমন একসময় ভিয়েতনাম সফরে এলেন যখন দেশটির সঙ্গে তাঁদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে ভিয়েতনাম ও চীনের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব আরও বেড়েছে।
বাইডেনের এই সফরে ভিয়েতনাম এয়ারলাইনস বোয়িংয়ের কাছ থেকে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলারে ৫০টি ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান কেনার প্রাথমিক চুক্তি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কাছেও ভিয়েতনাম গুরুত্বপূর্ণ, যার নিদর্শন হিসেবে গুগল, ইনটেল, আমকর, মারভেল, গ্লোবাল ফাউন্ড্রিস, বোয়িংয়ের শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীরাও ভিয়েতনামে গেছেন। ভিয়েতনাম সরকারের প্রযুক্তিবিষয়ক কর্মকর্তা ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে তাঁরা সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সব আলোচনার কেন্দ্রে আছে সেমিকন্ডাক্টর। এই আলোচনা থেকে এ নিয়ে ঘোষণা আসতে পারে, তবে দুই দেশের এই অংশীদারত্বে আর কী থাকতে পারে, তা পরিষ্কার নয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সেমিকন্ডাক্টরের সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলতে মার্কিন সরকার বছরে ১০০ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ডলার করে সহায়তা দেবে। মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এর বড় অংশ ভিয়েতনামে যেতে পারে।
তবে চিপ খাতে ভিয়েতনামে দক্ষ জনবলের ঘাটতি আছে। সে জন্য মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, প্রশিক্ষিত জনবল তৈরিতে আরও সহায়তা দেওয়া হবে এই চুক্তিরই অংশ।
এ ছাড়া বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও দুজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, বাইডেনের এই সফরে বিরল খনিজবিষয়ক চুক্তিও হতে পারে, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তেমন কিছু জানা যায়নি।