রুশ সম্পদ বিক্রিতে পশ্চিমা কোম্পানিকে চাপ দেওয়া উচিত নয়: ধনকুবের দেরিপাসকা

রাশিয়ার পতাকাফাইল ছবি: রয়টার্স

রুশ ধনকুবের ওলেগ দেরিপাসকা বলেছেন, রাশিয়ায় সম্পদ বিক্রি করতে পশ্চিমের বিনিয়োগকারীদের চাপ দেওয়া উচিত হবে না। তিনি মনে করেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে অসততা আছে; একই সঙ্গে এর মধ্যে দূরদৃষ্টির অভাব আছে। ফলে তা রুশ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করলে অনেক পশ্চিমা কোম্পানি রাশিয়া ছেড়ে চলে যায়; তাদের সম্পদ রুশ সরকারের ব্যবস্থাপনায় চলে আসে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অনেক মিত্র এসব সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেন।

এখনো যেসব পশ্চিমা বিনিয়োগকারী রাশিয়ায় আছেন তাঁদের ভাষ্য হচ্ছে, সম্পদ বিক্রি করে দিতে তাঁদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত কম দামে এই সম্পদ বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাদের; এমনকি তাঁদের উচ্ছেদ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের রুশ সংস্করণে দেরিপাসকাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, রাশিয়ায় বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সম্পদ বিক্রি করতে চাপ দেওয়া অসৎ আচরণ; এর মধ্যে দূরদৃষ্টির অভাবে যেমন আছে, তেমনি রুশ অর্থনীতিসহ বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য তা ক্ষতিকর’। দেরিপাসকার এক মুখপাত্র এই মন্তব্যের সত্যতা স্বীকার করেছেন।

ওলেগ দেরিপাসকা আরও বলেছেন, ‘রাশিয়ায় এখনো যে কজন পশ্চিমা বিনিয়োগকারী আছেন, তাঁদের হাতে সম্পদের মালিকানা থাকা আবশ্যক; এবং এই কঠিন সময়ে তাঁদের টিকে থাকাও গুরুত্বপূর্ণ’।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর ফেলে যাওয়া সম্পদ একেবারে সস্তায় কিনে রাশিয়ার অনেক ব্যবসায়ী শতকোটিপতি হয়ে গেছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে—এই অভিযোগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই ওলেগ দেরিপাসকাও ব্রিটেনের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিলেন। যদিও তিনি এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি আশ্রয় নিয়েছেন। বলেছেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে এবং আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন ওলেগ দেরিপাসকা। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর তিনি ধাতুর ব্যবসায় নাম লেখান। তখন তিনি এক অ্যালুমিনিয়াম কারখানার অংশীদারি কিনে নিজের ভাগ্য গড়েন। ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, তাঁর সম্পদমূল্য ২৮০ কোটি ডলার।

ওলেগ দেরিপাসকা বেসিক এলিমেন্ট নামের এক শিল্পগোষ্ঠী গড়ে তোলেন। এই গোষ্ঠীর খনি ব্যবসা থেকে শুরু করে জ্বালানি, সম্পদ ও কৃষি ব্যবসা আছে। এসব কিছুর ভিত্তি হচ্ছে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সাইবেরিয়ান অ্যালুমিনিয়াম; সোভিয়েত-উত্তর রাশিয়ার অ্যালুমিনিয়াম খাতের বড় একটি অংশ এই গোষ্ঠীর হাতে।

২০২২ সালে দেরিপাসকা ইউক্রেনে শান্তির আহ্বান জানান; এই যুদ্ধকে তিনি রুশ ও ইউক্রেনীয় জনগণের জন্য ট্র্যাজেডি হিসেবেই দেখেন।

এদিকে শুধু যুক্তরাজ্য নয়, ২০১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েছিলেন ওলেগ দেরিপাসকা। তখন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তিনি তখন রুশ সরকারের হয়ে বিশ্বব্যাপী কুৎসা রটানোর প্রচারাভিযানের অংশ ছিলেন।
তখন অবশ্য ওলেগ দেরিপাসকা বলেছিলেন, ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ তোলা হয়, তা ভিত্তিহীন, হাস্যকর ও উদ্ভট।