৩ মাসে বিপির মুনাফা ৫০০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে কম

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে
ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমেছে। সেই খবরে গতকাল মঙ্গলবার বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে বিপির শেয়ারের দর ৫ শতাংশের বেশি কমেছে।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিপির মুনাফা হয়েছে ৫০০ কোটি ডলার, গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৬২০ কোটি ডলার।

গত বছর এই সময় রাশিয়ার-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে হঠাৎ জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু বছরের শেষ দিকে তেলের দাম অনেকটা কমে আসে, যে ধারা এখনো চলছে। সে জন্য চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিপির মুনাফা কমেছে, যদিও ২০২১ সালের এই সময় তাদের মুনাফা হয়েছিল ২৬০ কোটি ডলার। সেই তুলনায় এ বছর একই সময়ে বিপির মুনাফা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।

আগের বছরের তুলনায় কমলেও ৫০০ কোটি ডলার মুনাফা কম নয় বলেই মনে করছে বিপি। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, গ্যাস বিক্রয়ে ‘অসাধারণ বিপণন’ ও ‘শক্তিশালী তেল বাণিজ্যের’ কারণে তারা এতটা মুনাফা করতে পেরেছে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিপি ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি বড় জ্বালানি কোম্পানি প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, প্রথম প্রান্তিকের মুনাফা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ঠিক, কিন্তু মুনাফার সূচক যথেষ্ট ঊর্ধ্বমুখী। তবে গত বছরের তুলনায় কম বলে বিনিয়োগকারীরা হতাশ হতে পারেন।
২০২২ সালে বিপি, শেভরন, এক্সনমবিল, শেল ও টোটালএনার্জিস বিনিয়োগকারীদের ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারের বেশি লভ্যাংশ দিয়েছিল। নানাভাবে তারা সেটা করেছে, যেমন শেয়ার বাইব্যাক ও সরাসরি লভ্যাংশ দেওয়া।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিপি ১৭৫ কোটি ডলারের শেয়ার বাইব্যাক করেছে বলে গতকাল জানিয়েছে; গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অর্থমূল্যে যা ৭৫ কোটি ডলার কম। এ ছাড়া গত বছরের শেষ প্রান্তিকে তারা যে লভ্যাংশ দিয়েছিল, বছরের প্রথম প্রান্তিকে তা অপরিবর্তিত রেখেছে।

গতকাল বিপির শেয়ারের দাম কমলেও চলতি বছর বিপির শেয়ারদর সব মিলিয়ে ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। মূলত তেল ও গ্যাসের উত্তোলন বৃদ্ধির প্রভাব বিপির শেয়ারদরে পড়েছে বলে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে। তবে এতে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে বিপির অঙ্গীকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।

অন্যদিকে বছরের প্রথম প্রান্তিকে তেল ও গ্যাস খাতের বড় মার্কিন কোম্পানি এক্সনমবিল ও শেভরন রেকর্ড মুনাফা করেছে। দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে এক্সনমবিল মুনাফা করেছে ১১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৩৪ কোটি ডলার ও শেভরন করেছে ৬৫৭ কোটি ডলার।

গত বছরের একই সময়ে, অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চে এক্সনমবিল মুনাফা করেছিল ৫৪৮ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এবার তারা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ মুনাফা করেছে। এমনকি এর মধ্যে রাশিয়া ত্যাগের কারণে তাদের অভিহিত মূল্য ৩৪০ কোটি ডলার কমে যাওয়ার পরও তারা এতটা মুনাফা করেছে।

গত বছরও রেকর্ড মুনাফা করেছিল জ্বালানি কোম্পানিগুলো। পশ্চিমা বিশ্বের বড় ৬টি জ্বালানি তেল কোম্পানি ২০২২ সালে সব মিলিয়ে মুনাফা করেছে ২১ হাজার ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলার। এর বাইরে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকো একাই ১৬ হাজার ১১০ কোটি মার্কিন ডলার মুনাফা করে গত বছরে। লাভের এ অঙ্ক ছিল তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এক বছর আগে আরামকো যে পরিমাণ মুনাফা করেছিল, গত বছরের মুনাফা ছিল তার চেয়ে ৪৬ শতাংশ বেশি।

তেলের উচ্চমূল্যের কারণে গত বছর সারা পৃথিবীর মানুষকে উচ্চমূল্যে জ্বালানি কিনতে হয়েছে। তাতে যেমন মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, তেমনি দেশে দেশে কমেছে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ। সামগ্রিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে।