ভারতীয় স্টার্টআপে সংকট, বিনিয়োগ বাড়ছে না, তিন মাসে কর্মী ছাঁটাই সাড়ে ৯ হাজার

ভারতীয় স্টার্টআপগুলোর সময় ভালো যাচ্ছে না
রয়টার্স

চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ভারতের স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো প্রায় ৯ হাজার ৪০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করেছে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কম অর্থ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে এসব কোম্পানি। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

একই সঙ্গে বিনিয়োগের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সামনে আরও কর্মী ছাঁটাই হতে পারে বলে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো আভাস দিয়েছে। ভারতের কর্মী নিয়োগকারী সংস্থা ক্যারিয়ারনেট ইকোনমিক টাইমসকে এ তথ্য জানিয়েছে।

ক্যারিয়ারনেট জানিয়েছে, ফিনটেক, ই–কমার্স, এডটেক, লথটেকসহ প্রায় সব ধরনের স্টার্টআপ কোম্পানির মধ্যেই কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রবণতা দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি কর্মী ছাঁটাই করেছে এডটেক স্টার্টআপগুলো।

কর্মী ছাঁটাই করা ভারতের শীর্ষ স্টার্টআপগুলোর মধ্যে রয়েছে—এডটেক ফার্ম বাইজুস ও আনএকাডেমি, সোশ্যাল মিডিয়া স্টার্টআপ শেয়ারচ্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট-ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্ম মাইগেট এবং গাড়ি পরিষেবা দেওয়া কোম্পানি গোমেকানিক। এসব কোম্পানি তাদের প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কর্মীকে ছাঁটাই করেছে।

এ ছাড়া ভারতের প্রায় ৭০ শতাংশ স্টার্টআপ কোম্পানি গত ৩ মাসে ১০০ থেকে ৩০০ জন কর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছে। এই তালিকায় সেবাদানের জন্য সাধারণ গ্রাহকের কাছে খুবই জনপ্রিয় বেশ কিছু স্টার্টআপ কোম্পানিও রয়েছে। যেমন তাৎক্ষণিক সরবরাহ (ডেলিভারি) পরিষেবা প্রদানকারী ডানজো, হেলথটেক সফটওয়্যার পরিষেবা দেওয়া স্টার্টআপ ইনোভাসার ও রাইড শেয়ারিং স্টার্টআপ ওলা।

ক্যারিয়ারনেটের তথ্য অনুসারে, গত বছরের একই সময় অর্থাৎ জানুয়ারি-মার্চ সময়ের তুলনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর জ্যেষ্ঠ পদে নিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এসব পদের কর্মীদের বার্ষিক বেতন প্যাকেজ ৫০ লাখ রুপির বেশি। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে ক্যারিয়ারনেট।

বিশেষ করে ই–কমার্স ও এডটেক কোম্পানিগুলোতে নতুন কর্মী নিয়োগের পরিমাণ কমেছে। ক্যারিয়ারনেট জানিয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় (জানুয়ারি-মার্চ) ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের পরিমাণ ৯৩ শতাংশ এবং এডটেক কোম্পানিতে নিয়োগের পরিমাণ ৮৪ শতাংশ কমেছে।

ক্যারিয়ারনেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) অংশুমান দাস বলেন, আগামী দুই প্রান্তিকেও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

তবে সামনের দিনগুলোয় নতুন কিছু বিনিয়োগ আসতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন অংশুমান দাস। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তারা ভালো বিনিয়োগ পেতে পারেন। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি ভালো যাবে না।

স্বস্তির লক্ষণ নেই

বেশ কিছু স্টার্টআপ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও বিনিয়োগকারী ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, পর্যাপ্ত পুঁজি থাকা সত্ত্বেও তাঁরা নতুন নিয়োগর ক্ষেত্রে ধীরগতিতে চলেছেন। কারণ, বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নতুনভাবে সাজাতে হচ্ছে।

ভারতের মীরা অ্যাসেট ভেঞ্চার ইনভেস্টমেন্টের সিইও আশিস ডেভ বলেন, স্টার্টআপ খাতে চলমান ছাঁটাই অব্যাহত থাকতে পারে। কোম্পানিগুলো যে প্রবৃদ্ধির আশায় কর্মী নিয়োগ করেছিল, ততটা প্রবৃদ্ধি হয়নি। বরং এখন যখন ব্যয় অনেক বেড়েছে, তখন তারা নতুন খরচ-কাঠামোর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। তবে তা করছে বিভিন্নভাবে খরচ কমানো ও ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে।

অনলাইনে খাবার অর্ডার সরবরাহের প্ল্যাটফর্ম সুইগি গত জানুয়ারিতে প্রায় ৩৮০ জনকে ছাঁটাই করে। সে সময় সুইগির প্রতিষ্ঠাতা শ্রীহর্ষ মাজেটি কর্মীদের বলেছিলেন যে তাঁরা অনেক লোককে নিয়োগ দিয়েছিলেন। সেই হিসেবে তাঁদের আরও ভালো করা উচিত ছিল, কিন্তু সেটা ঘটেনি। এই অতিরিক্ত নিয়োগ একটি দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

স্থানীয় ভাষার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম শেয়ারচ্যাটের সিইও অঙ্কুশ সচদেবা বলেছেন, তাঁরা ২০২১ সালের প্রবৃদ্ধিকে বিবেচনায় নিয়ে বেশি কর্মী নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময় বিশ্বব্যাপী তারল্য সংকট ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এখন চাপে রয়েছেন।

তহবিল সংকট অন্যতম কারণ

ক্যারিয়ারনেট তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে তহবিল জোগাতে মোট ২৬০টি বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। এতে তহবিল হিসাব করা হয়েছে ৩৪০ কোটি মার্কিন ডলার। অথচ ২০২২ সালের একই সময়ে তা ছিল ১ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার।

অর্থাৎ স্টার্টআপে অর্থায়নের পরিমাণ ৭১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। বেঙ্গালুরুভিত্তিক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম থ্রিওয়ানফোর ক্যাপিটালের প্রতিষ্ঠাতা অংশীদার সিদ্ধার্থ পাই বলেন, স্টার্টআপ বিনিয়োগে বর্তমানে মন্দা অবস্থা চলছে। তবে খুব সম্প্রতি এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে।