ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে কী কী আদেশ দেবেন ট্রাম্প
আজ ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই তিনি বলে আসছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পরই তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ দেবেন। প্রথম দিনেই বেশ কিছু আদেশে সই করতে পারেন তিনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নির্বাহী আদেশের ‘ঝড় তোলা’র কথা বলেছেন ট্রাম্প। জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের কর্মকর্তা স্টিফেন মাইরো ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ট্রাম্পের লক্ষ্য হলো শুরুতেই বড় ধরনের ধাক্কা দিয়ে প্রতিপক্ষের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া।
জনতুষ্টিবাদী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের দল পূর্বপ্রস্তুতি সেরে রেখেছে বলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদের শুরু থেকেই স্বৈরশাসক হওয়ার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। প্রথম দিনেই তিনি অভিবাসন হ্রাস, শুল্ক বৃদ্ধি, জ্বালানি ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ শিথিলের মতো বিষয়ে নির্বাহী আদেশে সই করতে পারেন।
এদিকে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু করেছেন। এই কয়েনের বাজারমূল্য দ্রুত কয়েক বিলিয়ন বা কয়েক শ কোটি ডলারে উঠে গেছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি চলাকালেই $Trump/$ ট্রাম্প নামে একটি মিমে কয়েন প্রকাশ করেন তিনি। সিআইসি ডিজিটাল এলএলসি নামে প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে কয়েনটি বাজারে এসেছে, প্রতিষ্ঠানটি এর আগেও ট্রাম্প ব্র্যান্ডের জুতা ও সুগন্ধি বিক্রি করেছে।
মিমে কয়েন সাধারণত কোনো ভাইরাল ইন্টারনেট ট্রেন্ড বা আন্দোলনকে জনপ্রিয় করতে ব্যবহৃত হয়। তবে এগুলোর নিজস্ব মূল্য নেই; বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবেও অনিশ্চিত।
ট্ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম সপ্তাহেই বাণিজ্যের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে। এই ব্যবস্থার কারণে আর্থিক বাজারেও প্রভাব পড়তে পারে। বাণিজ্য অংশীদারদের অভিবাসন থেকে শুরু করে ওষুধ পাচারের মতো বিষয়ে চুক্তি করতে বাধ্য করতে চান ট্রাম্প। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি করবেন তিনি।
তবে রিপাবলিকান পার্টির অনেকেই শুল্ক বৃদ্ধির পক্ষে নয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে, তাঁরাও এখন আগেভাগে ট্রাম্পের সম্ভাব্য পদক্ষেপের পক্ষে কথা বলছেন। কংগ্রেসের এক রিপাবলিকান সদস্য বলেছেন, এবার হয়তো আরও অনেক দেশকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা যাবে। পণ্যমূল্য বৃদ্ধির চেয়ে বরং এটাই বেশি কার্যকর হবে।
ট্রাম্পের আরেকটি বড় অঙ্গীকার হলো আমলাতন্ত্রের লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করা। জ্বালানি উৎপাদনে জো বাইডেন যেসব নিষেধাজ্ঞা বা সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিলেন, ট্রাম্প সেগুলোর অবসান ঘটাতে চান। এ ছাড়া তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের রপ্তানির লক্ষ্যে টার্মিনাল নির্মাণের লাইসেন্স দেবেন ট্রাম্প। ধারণা করা হচ্ছে, আলাস্কার সুরক্ষিত ভূমিতে খনি অনুসন্ধানের লক্ষ্যে খননের অনুমতি দেবেন।
সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলেই সবকিছু করতে পারেন না। সেখানে কংগ্রেসের ভূমিকা আছে। ফলে প্রথম কয়েক দিনে তিনি কীভাবে কাজ করেন, তার ওপর নির্ভর করবে কংগ্রেসকে ছাড়া এককভাবে তিনি কতটা কী করতে পারেন।
এবার দেখে নেওয়া যাক অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্প কী কী অঙ্গীকার করেছিলেন। ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে জিনিসপত্রের দাম কমবে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, তাঁর এই অঙ্গীকার বিপজ্জনক। বাজারে জিনিসপত্রের দাম কদাচিৎ কমে, অর্থনৈতিক সংকট না হলে জিনিসের দাম কমে না। মূল্যস্ফীতি তো জিনিসপত্রের দামের মানদণ্ড নয়, বরং দাম কতটা বাড়ল, তার মানদণ্ড। মূল্যস্ফীতির হার যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে অনেকটা কমেছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি একেবারে কমে যাবে না।
এ ছাড়া ট্রাম্প গ্যাস ও জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে, জ্বালানির দাম কমানো। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি হয় বা জ্বালানির দাম বাড়ে, সেই সব কারণের বেশির ভাগই প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
হোয়াইট হাউসের কিছু নীতির কারণে জ্বালানির দামে প্রভাব পড়তে পারে ঠিক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপসহ অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির উল্টো অবনতি হতে পারে।