তুরস্কে আবার বেড়েছে নীতি সুদহার, বলা হয়েছে এটাই চূড়ান্ত দফা

আরও এক দফা নীতি সুদহার বাড়িয়েছে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে দেশটি গত জুন থেকে সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। তবে সর্বশেষ দফার সুদহার বৃদ্ধি চলতি আবর্তনে চূড়ান্ত বৃদ্ধি বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার এখন চার গুণ বেড়েছে, যার লক্ষ্য হলো তুরস্কের রেকর্ড পরিমাণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা।

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, এর ফলে নীতি সুদহার ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৫ শতাংশ হবে বলে বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তারা মনে করছে যে তুরস্কের জীবনযাত্রার ব্যয় মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এই বৃদ্ধি যথেষ্ট হবে।

এক বিবৃতিতে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ‘মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য মুদ্রানীতি কঠোর করার কাজ শেষ হয়েছে এবং যত দিন প্রয়োজন হবে, তত দিন এই হার বজায় রাখা হবে।’ গত জুনে তুরস্কে সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত ২১ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। তাঁর শাসনামলে সুদের হার এর আগে কখনো এতটা বাড়ানো হয়নি।

চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হাফিজে গায়ে এরকান প্রচণ্ড সমালোচনার মধ্যে ছিলেন। এরই মধ্যে চূড়ান্ত দফার এই সুদহার বৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে। ৪৪ বছর বয়স্ক এরকান নিউইয়র্কের আর্থিক বাজারের সাবেক একজন নির্বাহী। তিনি তুরস্কের সবচেয়ে শীর্ষস্থানীয় নারী কর্মকর্তা।

তবে সামাজিক মাধ্যম ও কিছু বিরোধী প্রকাশনায় খবর বেরিয়েছে যে ব্যাংকে তাঁর পিতা অননুমোদিতভাবে কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যে সুযোগ তিনিই করে দিয়েছেন। এ ছাড়া এমন খবরও বেরিয়েছে যে তিনি এরদোয়ানকে ক্ষুব্ধ করেছেন। বাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণে ইস্তাম্বুলে তিনি বাবা-মায়ের বাড়িতে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন, একটি সংবাদপত্রকে এমন বক্তব্য দেওয়ার কারণে তুর্কি প্রেসিডেন্ট তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন বলে ওই খবরে বলা হয়।

তবে তুরস্কের প্রথম নারী গভর্নরের ওপর এই আক্রমণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তাঁর কর্মকর্তাদের ওপর দীর্ঘ মেয়াদে কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার কারণেই এই উদ্বেগ বলে খবরে বলা হয়।

এরকানকে সমর্থন
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সারা জীবন ধরেই উচ্চ সুদহারের বিরোধী। এ ব্যাপারে তাঁর বহুল আলোচিত বক্তব্য ছিল এমন—উচ্চ সুদ ‘সব অমঙ্গলের মা এবং বাবা’। অপ্রথাগত অর্থনৈতিক নীতির একজন প্রবক্তা তিনি। মূল্যস্ফীতি যখন বাড়ছিল, তখন তিনি সুদের হার কমিয়েছেন। তুরস্কের অর্থনীতির খারাপ অবস্থার জন্য বিশ্লেষকেরা তাঁকে দায়ী করে থাকেন।

গত দুই দশকের মধ্যে ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হার ৮৫ শতাংশে পৌঁছায়। আর গত মাসে মূল্যস্ফীতি আবারও বৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬৫ শতাংশ।

তবে এই সংকটই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে তাঁর নীতি থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। গত বছর তিনি যাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, সেই প্রার্থী তুরস্কের অর্থনৈতিক দুরবস্থাকে নির্বাচনী প্রচারণার উপজীব্য করেছিলেন। গত মে মাসের দ্বিতীয় দফার ভোটে এরদোয়ান শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেন।

ওই নির্বাচনে জেতার পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অর্থমন্ত্রী হিসেবে মেহমেত সিমসেক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে হাফিজে গায়ে এরকানকে নিয়োগ করেন। এই দুজন পশ্চিমা বিনিয়োগকারীদের কাছে শ্রদ্ধাভাজন হিসেবে পরিচিত। তাঁরাই তুরস্ককে একটি অর্থনৈতিক দুর্যোগের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরিয়ে আনেন বলে মনে করা হয়।

ঋণ করার খরচ নাটকীয়ভাবে বাড়াতে তাঁরা এরদোয়ানকে রাজি করান। পাশাপাশি তাঁরা এমন কিছু পদক্ষেপ নেন, যা ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাধা সৃষ্টিকারী নিয়ন্ত্রণের মুষ্টি শিথিল করে।

হাফিজে গায়ে এরকান যখন সমালোচনার মুখোমুখি হন, তখন গত বুধবার এরদোয়ান গভর্নরের পাশে দাঁড়ান। ফলে বিনিয়োগকারীরা অনেকটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। এরদোয়ান বলেন, ‘অর্থনীতির কঠিন সময়ে আমরা যে বিশ্বাস ও স্থিতিশীলতা অর্জন করেছি, তা ধ্বংস করার জন্য অযৌক্তিক গুজব সৃষ্টি করে তারা প্রচারণা চালাচ্ছে।’

গভর্নরের পিতা সম্পর্কে যেসব গুজব ছড়ানো হয়েছে, তার শুরু যখন হাফিজে গায়ে এরকান ওয়াশিংটনে একটি বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছিলেন। তবে বুধবার ইরানের প্রেসিডেন্ট এবরাহীম রাইসী যখন আঙ্কারা সফর করছিলেন, তখন দেখা যায় হাফিজে এরকান অন্য শীর্ষ মন্ত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে সফররত প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাচ্ছেন।