আবার গতি হারিয়েছে মার্কিন অর্থনীতি, নভেম্বরে কমেছে উৎপাদন
গতি হারিয়েছে মার্কিন অর্থনীতি। নভেম্বর মাসে দেশটির উৎপাদন খাত স্তিমিত হয়ে পড়েছে; সেই সঙ্গে কমেছে কারখানার কর্মসংস্থান ও বেড়েছে ছাঁটাই। আগের প্রান্তিকে চাঙা হওয়ার পর অর্থনীতি যে গতি হারাচ্ছে, এসব তার লক্ষণ বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে।
অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার কমে এসেছে এবং তার সঙ্গে কমেছে ভোক্তা ব্যয়। দেশটির ইনস্টিটিউট অব সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের (আইএসএম) জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, উচ্চ নীতি সুদহারের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কমেছে। যদিও সিংহভাগ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, আগামী বছর মন্দা হবে না এবং ফেডারেল রিজার্ভ সেই পরিস্থিতি এড়িয়ে কিছু পরিমাণে হলেও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, ‘অর্থনীতি থেকে আমাদের যা পাওয়ার ছিল, আমরা তা নিতে পারছি।’
আইএসএমের তথ্যানুসারে, উৎপাদন খাতের পিএমআই বা প্রোডাকশন ম্যানুফ্যাকচারিং ইনডেক্স (পিএমআই) গত মাসে ৫০-এর নিচে নেমে এসেছে, যার মান ছিল ৪৬ দশমিক ৭। এ নিয়ে টানা ১৩ মাস পিএমআইয়ের মান ৫০-এর নিচে থাকল। এর অর্থ হলো, উৎপাদন খাত সংকুচিত হয়েছে। ২০০০ সালের আগস্ট থেকে ২০০২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের পর আর কখনো পিএমআই একটানা এত দিন ৫০-এর নিচে থাকেনি।
অনেক অর্থনীতিবিদ বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স বা অটো শ্রমিকদের ধর্মঘট গত অক্টোবর মাসে শেষ হলেও তার প্রভাব পিএমআইতে পড়েছে। কিছুদিন পর যে তা ঘুরে দাঁড়াবে, সেই সম্ভাবনা কম। আইএসএমের জরিপে তেমনটাই দেখা গেছে।
নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এফএইচএন ফাইন্যান্সিয়ালের সামষ্টিক অর্থনীতিবিষয়ক কৌশলবিদ উইল কমপারনোল রয়টার্সকে বলেন, বোঝা যাচ্ছে, পণ্য উৎপাদন খাত বাজারের চাহিদা সম্পর্কে অতিরিক্ত ধারণা দিয়েছিল এবং আগামী কয়েক মাসে উৎপাদনের গতি আরও কমে যেতে পারে। বিষয়টি হচ্ছে অটোশ্রমিকদের ধর্মঘটের সময় অনেক যন্ত্রাংশ জমে গিয়েছিল এবং সে জন্য মনে হয়েছিল, বাজারে গাড়ির চাহিদা আছে।
অর্থনীতিবিদদের নিয়ে করা রয়টার্সের জরিপের পূর্বাভাস, পিএমআইয়ের মান ৪৭ দশমিক ৬ পর্যন্ত উঠতে পারে। পিএমআইয়ের মান টানা কিছুদিন ৪৮ দশমিক ৭-এর নিচে থাকলে বোঝা যায়, অর্থনীতি সামগ্রিকভাবে সংকুচিত হতে পারে। তবে এর মধ্যেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত আছে, বার্ষিক হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য, পানীয়, তামাক; যাতায়াত ও অধাতব খনিজ পদার্থ খাতের সম্প্রসারণ হয়েছে। ১৪টি খাতের সংকোচন হয়েছে, যেমন কাগজ, বৈদ্যুতিক উপকরণ, ইলেকট্রনিক ইত্যাদি।
উৎপাদন খাত, বিশেষ করে কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক খাত হতাশা প্রকাশ করেছে। তারা মজুত কমানোর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে জানিয়েছে। তবে দেশটির অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের সাধারণ ধারণা হলো, অর্থনীতি অনেকটা গতি হারিয়েছে। বিবিধ উৎপাদন খাত জানিয়েছে, গ্রাহকদের ক্রয়াদেশ ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। সে জন্য বছর শেষে মজুতের পরিমাণ একটু বেশি দেখাচ্ছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে, অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাণ খাতে ব্যয় বেড়েছে। মূলত অণুপরিবারগুলোর বাড়ি কেনা বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এলপিএল ফাইন্যান্সিয়ালের প্রধান অর্থনীতিবিদ জেফরি রোচ বলেন, অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার লক্ষণ থাকলেও বিনিয়োগকারীদের জানা উচিত, এখনো কিছু খাতের ভালো সম্ভাবনা আছে।
জরিপের তথ্যানুসারে, নভেম্বর মাসে কর্মসংস্থানও গতি হারাবে। তবে নভেম্বর মাসে অটো শ্রমিকেরা ধর্মঘট থেকে ফেরায় উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, অক্টোবর মাসে যা ৩৫ হাজার হ্রাস পেয়েছিল।
সামগ্রিকভাবে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অকৃষি খাতে কর্মসংস্থান ১ লাখ ৭০ হাজার বেড়েছে বলে আশা করা হচ্ছে, অক্টোবর মাসে যা বেড়েছিল ১ লাখ ৫০ হাজার।
আগামী শুক্রবার কর্মসংস্থানের সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশিত হবে।