অর্থনীতি বাঁচাতে যা করতে পারেন বাইডেন

জো বাইডেন
ছবি: রয়টার্স

বলা যায় দ্বিতীয় মেয়াদের নির্বাচনে একরকম করোনার কাছে হেরে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনাকালে তাঁর অবান্তর সব মন্তব্যের কারণে প্রথমে করোনার ভয়াবহতা বুঝতে পারেনি মানুষ। এর মূল্য চরমভাবেই দিতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে, এখনও হচ্ছে।

তবে মার্কিন জনগোষ্ঠীর সামনে নতুন আশার আলো হয়ে আসছে নতুন নেতৃত্ব। ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হবেন জো বাইডেন। দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তাঁর ভূমিকা কেমন হবে, এটাই এখন দেখার বিষয়। গণমাধ্যমেও বিশ্লেষণ হচ্ছে অর্থনীতির জন্য বাইডেনের ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে। সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

১. করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে ব্যয় বাড়ানো

নভেম্বরে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকে জো বাইডেন প্রণোদনা বাড়াবেন এমন জল্পনা চলছে। ইতিমধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে বেশ পানি ঘোলা করেছেন। এখন বাইডেনের প্রথম কাজ হবে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকারদের জন্য অর্থের জোগান দেওয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহ আগেই গতকাল এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছেন বাইডেন। মার্কিন অর্থনীতির জন্য ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন তিনি। কংগ্রেসে এটি পাস হলে এর মধ্যে পরিবারগুলোর জন্য বরাদ্দ থাকছে ১ ট্রিলিয়ন ডলার। এর আওতায় সরাসরি ১ হাজার ৪০০ ডলার নগদ সহায়তা পাবেন প্রতিটি মার্কিন নাগরিক।

২. ন্যূনতম মজুরি ও কর বাড়ানো

অনেক বছর ধরেই মার্কিন ট্রেড ইউনিয়নগুলো ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে। বাইডেন ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের ন্যূনতম মজুরির সীমা ঘণ্টায় ১৫ ডলারে উন্নীত করে আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় আট বছর আগে ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলার করার দাবি ওঠে। তখন নিউইয়র্কে রেস্তোরাঁর কর্মীরা মজুরি বৃদ্ধি এবং একটি ইউনিয়ন গঠনের দাবিতে ধর্মঘট করেছিলেন। সেই দাবিতে সারা দেশের কর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। পরে নিউইয়র্কসহ বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে নানা শর্তে ধাপে ধাপে ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলারে উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১১ জনের বেশি কর্মী রয়েছেন এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি ১৩ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১৫ ডলার করে নিউইয়র্ক কর্তৃপক্ষ। সব প্রতিষ্ঠানে এ হার কার্যকর হয়নি।

এ ছাড়া বাইডেন ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ট্রাম্পের আমলে যেসব কোম্পানিকে কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল, সেসব কোম্পানির জন্য কর বাড়াতে পারেন বাইডেন। যদিও কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা দলে ভারী, তা–ও এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে রিপাবলিকানদের সমর্থন লাগবে বাইডেনের। ট্রাম্প করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশ করেন। ওয়াল স্ট্রিটের বিশ্লেষণ বলছে, কর বাড়ানোর বিষয়েটি এখন সেভাবে আলোচনায় নেই। যদিও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং হাওয়ার্ড কেনেডি স্কুলের অধ্যাপক জেসন ফোরম্যান মনে করেন, কিছু কর বৃদ্ধি সম্ভব।

৩. পরিবেশবান্ধব অবকাঠামোতে ব্যয়

নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই বাইডেন কথা দিয়েছেন পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে দ্রুত গতিশীল করবেন। এ রকম অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক যানের চার্জ দেওয়ার স্টেশন। অধ্যাপক ফারম্যান মনে করছেন, বাইডেন সরকারকে আগে অর্থনীতিকে সহযোগিতার জন্য অর্থ ঢালতে হবে। ট্রেন, গণপরিবহনের মতো ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। শোরম্যান অবশ্য মনে করেন, জলবায়ুবিষয়ক সিদ্ধান্তে ঐকমত্যে আসা কঠিন হবে বাইডেন সরকারের জন্য। তিনি বলেন, কিছু সুযোগ হয়তো তৈরি হবে, তবে সবটা অর্জন করা কষ্টকর।

৪. অভিবাসন ও পরিবেশ বিষয়ে নির্দেশনা বদল

এমন না যে বাইডেনকে সব সিদ্ধান্তের জন্য কংগ্রেসদের সমর্থন লাগবে। তাঁর নিজের কিছু নির্বাহী ক্ষমতা আছে, যার বলে তিনি অভিবাসন ও পরিবেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বাইডেন ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি জলবায়ুবিষয়ক প্যারিস চুক্তিতে আবার যোগ দেবেন। কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যেখানে ট্রাম্প ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন, সেগুলোও তুলে নেবেন। দূষণ বন্ধেও বাইডেন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।

৫. শিক্ষা ঋণে পদক্ষেপ

নির্বাচনী প্রচারে, শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার ডলার ঋণ মওকুফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন। তবে ইতিমধ্যে সিনেটররা এই সীমা বাড়ানোর জন্য বাইডেনকে চাপ দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ঋণ মওকুফের কথা, কিন্তু বাইডেন এই সীমা বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো কিছু বলেননি।