ইউক্রেনের জিডিপি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে: আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে কী ধরনের অর্থনৈতিক সংকট হতে পারে, তা নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারা বলছে, যুদ্ধ বেশি দিন চললে জেলেনস্কির দেশের, অর্থাৎ ইউক্রেনের অর্থনীতি ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে, এমন আশঙ্কা আছে।

বিবৃতিতে আইএমএফ জানিয়েছে, এভাবে যুদ্ধ চলতে থাকলে রাশিয়া–ইউক্রেন তো বটেই, বিশ্বব্যাপী মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। একই সঙ্গে ইউক্রেনের অর্থনীতিতেও সরাসরি তার প্রভাব পড়বে।

আইএমএফ জানিয়েছে, রুশ আক্রমণের ফলস্বরূপ ২০২২ সালেই ইউক্রেনের অর্থনীতি ১০ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে, কিন্তু এই যুদ্ধ চলতে থাকলে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়ানক।

এর আগে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করলে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ইউক্রেনের অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছিল। সেই দুই বছর ইউক্রেনের জিডিপি যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।

ইউক্রেনের অর্থনীতি মূলত রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। গত বছর দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ শতাংশ, সেবার রেকর্ড শস্য উৎপাদন করেছে তারা। ২০২২ সালে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, এমন আশা করা হয়েছিল কিন্তু রাশিয়ার আগ্রাসন তার বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্য আইএমএফ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সদস্যদেশগুলো যাতে ইউক্রেনকে সহায়তা পাঠাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করছে তারা। ইতিমধ্যে তারা ইউক্রেনকে ১৪০ কোটি ডলার সহায়তা করেছে।

বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর কিরিলো শেভচেঙ্কো বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার যে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে, সেই সম্পদ ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহার করা উচিত।

যুদ্ধের পরিস্থিতি
১৯ দিন যুদ্ধের পর সোমবার চতুর্থবারের মতো শান্তি বৈঠকে বসেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেন। সেই বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে কিংবা আদৌ হয়েছে কি না, রাশিয়া এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। তবে ইউক্রেন জানাচ্ছে, এই বৈঠক থেকে সমাধানের সূত্র মেলেনি।

রোববার ইউক্রেনে বিমান হামলা করেছে রাশিয়া। পোল্যান্ড সীমান্তে আকাশপথে রুশ হামলায় প্রাণ হারান অন্তত ৩৫ জন, আহত হয়েছেন ১৩৪ জন। এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির আবেদন, ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে রাশিয়ার জন্য আকাশসীমানা বন্ধ করে দিক, তা না হলে তাদের ওপরও হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। ইউক্রেন জানিয়েছে, ইতিমধ্যে রাজধানী কিভের ভেতরে ঢুকে পড়েছেন রুশ সেনারা। এই অবস্থায় শুধু শহরের দক্ষিণ দিকের রাস্তা নাগরিক যাতায়াতের জন্য খোলা। সেখানে টহল দিচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা আর বাকি সব জায়গায় সর্বশক্তি দিয়ে রুশ হামলা প্রতিহতের চেষ্টা করছেন তাঁরা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, জল, স্থল ও অন্তরিক্ষ—তিন দিক থেকে রাশিয়ার হামলায় বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ নাগরিকেরা। রোববার প্রাণ হারিয়েছেন আমেরিকার এক সাংবাদিকও, আহত হয়েছেন তাঁর সহকর্মী। দোকান, বাজার, স্কুল, হাসপাতালে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করছে রাশিয়া। চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রের দখল তারা আগেই নিয়েছিল। এখন সেই পারমাণবিক কেন্দ্রটি ধ্বংস করে দিয়েছেন রুশ সেনারা। জেলেনস্কির অভিযোগ, ইউক্রেন প্রশাসনকে সব দিক থেকে কোণঠাসা করতে নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করছেন পুতিন-সেনারা।