একই সমস্যায় ধুঁকছে ভারত-পাকিস্তান

উপমহাদেশের বড় দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। একদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) চলতি অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়েছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস জানিয়েছে, এ মুহূর্তে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি বার্ষিক ভিত্তিতে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ, যা নয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আজ বৃহস্পতিবার আরবিআইয়ের মুদ্রানীতিসংক্রান্ত কমিটির তিন দিনব্যাপী বৈঠক শেষ হয়েছে। বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, এই বৈঠকেও আরবিআই রেপো (কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ দেয়) ও রিভার্স রেপোর হার (কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদ) কমাবে। মূলত, অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করে প্রবৃদ্ধির হার টেনে তোলার লক্ষ্যে আরবিআই এর আগে টানা পাঁচটি মুদ্রানীতিসংক্রান্ত বৈঠকে রেপো ও রিভার্স রেপো কমিয়েছে। পাশাপাশি করপোরেট করহার কমানো, শিল্প খাতে প্রণোদনা,রাষ্ট্রায়ত্ত খাত থেকে বিলগ্নীকরণ—এমন অনেক টোটকা দিয়ে অর্থনীতিকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সর্বশেষ জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

পাকিস্তানের ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যমতে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি এতটা বেড়েছে। আবার দেশটির শহরাঞ্চলের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি। নভেম্বরে পাকিস্তানের শহরাঞ্চলের খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বার্ষিক হিসাবে ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ আর গ্রামাঞ্চলে তা ছিল ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

এই সময়ে বার্ষিক হিসাবে পাকিস্তানের শহরাঞ্চলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। আর গ্রামাঞ্চলে তা ছিল ৯ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির মূল কারণ ছিল তেলের মূল্যবৃদ্ধি। পাশাপাশি মুদ্রার বিনিময় মূল্যও কমেছে। মূলত, এই দুই প্রভাবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

গত মাসে ভারতের মূল্যস্ফীতি আরবিআইয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ছিল—৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। ভারতীয় বিশ্লেষকেরা এটিকে সতর্কবার্তা হিসেবে মানছেন। ফল ও সবজির মূল্যবৃদ্ধির কারণেই মূলত এই মূল্যস্ফীতি। যদিও অনেকে বলছেন, এটা মৌসুমি ব্যাপার এবং আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে তা কমে আসবে। প্রথমত, এ কারণেই আরবিআই টানা ষষ্ঠবারের মতো রেপোর হার কমানো থেকে বিরত থাকল। দ্বিতীয়ত, এখন রুপির মান তিন মাস আগের চেয়ে কম। মুদ্রার মান পড়ে যাওয়া মানে সুদের হারও কম থাকা। রুপির মান আরও পড়তে পারে। সে জন্য ভারতীয় নীতিপ্রণেতারা এই মুহূর্তে সুদহার কমানোর পক্ষপাতী নন। তৃতীয়ত, ব্যাংকে তারল্যের সংকট নেই। ফলে, এই মুহূর্তে সুদের হার কমিয়ে বিশেষ কাজ হতো না।

ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ থেকে ৪.৫ শতাংশে নেমেছে। গত ছয় ত্রৈমাসিকে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৮, ৭, ৬ দশমিক ৬, ৫ দশমিক ৮, ৫ ও ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এই পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেছেন সদ্য কারামুক্ত ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। তিনি বলেছেন, সরকার চরম ভুল করছে। আর ভুল করলে মানুষের হতবুদ্ধি হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুখ লুকাচ্ছেন। তিনি অর্থমন্ত্রীর হাতে সব ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন চিদাম্বরম।

ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনীতি এই মুহূর্তে নানা সমস্যার সম্মুখীন হলেও তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট স্থিতিশীল। তবে সম্প্রতি বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু প্রবৃদ্ধিতে এর প্রভাব এখনো পড়েনি। মূলত, সরকারি বিনিয়োগের কারণে প্রবৃদ্ধির হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।