এসডিজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে গেল ভারত

ছবি: রয়টার্স

জনস্বাস্থ্য থেকে সর্বজনীন শিক্ষা, শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণ বা বেকারত্ব-অর্থনীতি-কর্মসংস্থানের মতো এসব গুরুত্বপূর্ণ সূচকেও মোদি জমানায় ধারাবাহিকভাবেই পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ তো আগে থেকেই বেশির ভাগ সূচকে এগিয়ে ছিল। এবার শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার মতো অর্থনীতির দেশও গত কয়েক বছরে ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে।

খাদ্য সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ও সমাজে লিঙ্গবৈষম্য প্রবলভাবে থেকে যাওয়ার কারণে জাতিসংঘের ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা টেকসই উন্নয়নের সূচকে আগের তুলনায় দুই ধাপ নিচে নেমে গেল ভারত। বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা ওই তালিকায় ভারতের ওপরেই আছে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ এসডিজি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে যাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে, সে লক্ষ্যে ১৭টি বিষয়কে চিহ্নিত করে তা দূর করতে দেশগুলোকে পরিকল্পনা হাতে নিতে বলা হয়। ওই ১৭টি বিষয়ের মধ্যে প্রথমেই আছে দারিদ্র্য দূরীকরণ। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে রয়েছে সবার জন্য খাদ্য সুরক্ষা, সুস্বাস্থ্য, উন্নত মানের শিক্ষা, লিঙ্গবৈষম্য রোধ। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দ্বিতীয় ও পঞ্চম বিষয়ে খারাপ ফল করায় ভারতের স্থান দুই ধাপ নিচে নেমে গেল বলে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের সঙ্গে সামনে এল ভারতের শিশুদের অপুষ্টির ভয়াবহ ছবি, খাদ্য সুরক্ষা সূচকের নিম্নগতির সঙ্গে যা যথেষ্টই মানানসই। তথ্যের অধিকার আইনে করা একটি প্রশ্নের উত্তর থেকে সামনে এসেছে সেই ছবি। তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের ৯ লাখ ২৭ হাজার শিশুর ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভোগার কথা স্বীকার করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়।

আর এদের সিংহভাগই বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে, যার শীর্ষে আছে যোগী আদিত্যনাথশাসিত উত্তর প্রদেশ এবং বিজেপি জোটশাসিত বিহার। দুই রাজ্য মিলিয়ে সংখ্যাটা সাড়ে ৬ লাখের বেশি।

পিছিয়ে নেই বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশ, এমনকি কেন্দ্রশাসিত লাদাখ, লাক্ষা দ্বীপও। তালিকায় নাম রয়েছে উত্তর-পূর্বের নাগাল্যান্ডেরও।

সংকট ও সমাধান

বিশ্ব ইতিহাসে দেখা যায়, সংকটের পর নতুন সমাধান আসে। নতুন সংকটের মোকাবিলা করতে গিয়ে অনেক রাষ্ট্র পুরোনো সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজে পেয়েছে।

যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটেনের খাদ্যাভাব মেটাতে যে রেশনব্যবস্থা চালু হয়েছিল, সে দেশের দরিদ্রদের দুই বেলা যথেষ্ট আহারের নিশ্চয়তা সেই প্রথম দেওয়া হয়। এই অভিজ্ঞতা থেকেই দেশটি খাদ্য ও চিকিৎসার আরও সুষম বণ্টনের পথে হাঁটে।

অমর্ত্য সেন সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘লোকের টাকা হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এসব হবে—এই ধারণাটার মধ্যে চিন্তার যে প্রচণ্ড অভাব, সেটা শুধু সাধারণ লোকের স্বাস্থ্যকে দুর্দশার মধ্যে বন্দী রাখে না, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বড় সমস্যা ঘটলে আমাদের তা মোকাবিলা করার ক্ষমতা অত্যন্ত কমে যায়।’ সে জন্য তাঁর মত, খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো খাতে রাষ্ট্রের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ সংকট থেকে ভারত সেই শিক্ষা নিক।